Tuesday, April 27, 2021

সফলতায় কমিউনিকেশনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা


মূল বিষয় উপস্থাপনার আগে ছোট্ট একটা গল্প বলে নিই। আমার দুই/ আড়াই বছরের ছোট আমার এক খালাতো বোন আছে। তো ও দেখতে বেশ সুন্দর ছিল বলে এলাকার ছেলেরা নানাভাবে ওকে বিরক্ত করতো। আর কিছু কিছু গর্ধব ছিল যারা ওকে পছন্দ করতো কিন্তু তাদের কোনো কমিউনিকেশনের জ্ঞান ছিল না এবং সেইসাথে তাদের ইনভেস্টমেন্ট জ্ঞানও ছিল না। তারা করতো কী! তারা আমার খালার ফোনে সারাদিন রিকোয়েস্ট কল দিতো। এই অল্পবয়সী নাদানেরা ভাবতো এভাবে বিরক্ত করলে মনেহয় সিনেমার গল্পের মতো একটা কিছু ঘটবে। এখন তোমরা বলো তাদের এই কমিউনিকেশন দিয়ে কি কোনো কাজ হবে? যেখানে আজকাল যোগ্যতা ছাড়া বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সাহস পাওয়া যায় না, যোগ্যতা না থাকলে কোনো মেয়েও পাত্তা দেয় না। ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া কোনো প্রেম হয় না সেখানে এই কমিউনিকেশনে কী কাজ হবে?

কমিউনিকেশন জিনিসটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় যখন ন্যায়পথে থাকার পরেও শুধু কমিউনিকেশনের অভাবে আদালতের রায় বিপক্ষে চলে গিয়ে অসৎ লোকদের পক্ষে যায় কিংবা কোনো বৈঠক মিমাংসার সিদ্ধান্ত ন্যায়ভিত্তিক না হয়ে স্বার্থবাদীদের পক্ষে হয়।
যৌতুক জিনিসটা অপরাধ হলেও এই সূচকটা দ্বারা যেমন বর্তমানে বিয়ের বাজার গবেষণা করা যায় তেমনি এসব অন্যায্য রায় হতে কমিউনিকেশন জিনিসটার শক্তি ও গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পত্তি নিয়ে একটা মামলা চলে আসছিলো প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে। আমরা জেলা আদালত পর্যন্ত রায় পেলেও হাইকোর্টের রায় পাইনি শুধু কমিউনিকেশনের অভাবে। আমাদের প্রতিপক্ষ ক্রিকেটের ম্যাচ ফিক্সিং এর মতো আদালত ফিক্সিং করে রায়টা তাদের পক্ষে নিয়েছে। অথচ সবকিছু আমাদের জন্য ফেয়ারে থাকা সত্ত্বেও আমাদের আইনজীবীকে হাত করা ও সাক্ষীদের রিয়েল সাক্ষ্যকে সরিয়ে ফেলে রচনা করা সাক্ষ্য লিখে আমাদের ন্যায্য প্রাপ্তি ব্যহত করা এসব ছিল অন্যায় আর এই ঘটনার পেছনে ছিল একটি অসৎ কমিউনিকেশন।
তুমি অসৎ উদ্দেশ্যে নয় বরং নিজের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ও টিকে থাকার জন্য তোমার কমিউনিকেশনের বৃত্ত সমৃদ্ধ করো। শুধু তত্ত্বজ্ঞান নিয়ে বসে থেকে কিছু পাবে না।
মনে করো কোনো একটা পারিবারিক বিষয় মিমাংসার জন্য গ্রামের মহৎ কিংবা তোমার আত্নীয়দের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাউকে বা কয়েকজনকে ডেকেছো। এখন তুমি কি ভাবছো এখানে একটা ন্যায় মিমাংসা হবে? মোটেও না, এখানে মিমাংসার সিদ্ধান্ত যেটা হবে সেটা হবে বিচারকের স্বার্থের উপর নির্ভর করে। তোমার সাথে যদি বিচারকের কোনো স্বার্থের বিষয় জড়িত না থাকে তাহলে তুমি যে ন্যায্যতা আশা করেছিলে তা কিছুতেই পাবে না, সিদ্ধান্তটা বিচারকেরা সেই পক্ষেই বেশি দিবেন যে পক্ষে বিচারকের লেনদেন ও স্বার্থের সম্পর্ক রয়েছে। আর এই স্বার্থের সম্পর্কটা সৃষ্টি হয়েছে কোনো একটা কমিউনিকেশনের মাধ্যমে। তোমার যদি এরূপ কমিউনিকেশন না থাকে তাহলে তুমি যতই ন্যায্যতার যুক্তি দেখাও তারা তোমার কথা কানে ঢুকাবে না। মিমাংসাকারী এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ না করে বরং স্বার্থবাদী আচরণই করবে।

কমিউনিকেশন জ্ঞান যাদের নাই তারা কোনো সমস্যা সমাধানে হাতড়ে মরে, অথচ অন্য কেউ কমিউনিকেশন দক্ষতা বলে দ্রুত সেটা সমাধান করে ফেলে। ধরে নাও ইঁদুরের গর্ত দিয়ে একটা উঁচু জমির পানি নিচু জমিতে পড়ে যাচ্ছে। এখন তুমি যদি নিচু জমিতে যেখানে পানি বের হচ্ছে সেখানে বারবার মাটি দিয়ে কুলুপ লাগাও তাহলে সারাদিনেও পানি পড়া বন্ধ করতে পারবেনা, কয়েক সেকেন্ড পরেই কুলুপ লাগানো মাটি পানির চাপে গলে পড়ে যাবে এবং আবার পানি পড়তে শুরু করবে। এই পানি পড়া বন্ধ করতে হলে তোমাকে উঁচু জমিতে যেখানে সেই গর্তে পানি ঢুকছে সেখানে মাটি দিয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিয়ে গর্তে পানি ঢোকা বন্ধ করতে হবে।
কমিউনিকেশন জ্ঞান হলো এই উঁচু জমির গর্তের মুখ বন্ধ করার মতো একটি ফলপ্রসূ জ্ঞান। সমস্যার জায়গায় সমস্যাকে নিয়ে শক্তি ব্যয় না করে সমস্যার উৎপত্তিস্থলের সাথে কমিউনিকেশন স্থাপন করে সেটি সমাধান করো।

তুমি যত বেশি মানুষের সাথে যত বেশি স্ট্রং কমিউনিকেশন গড়ে তুলতে পারবে তত বেশি তুমি পেশাগত ও পারিবারিক জীবনে বিভিন্ন বিষয়ে সফল হবে এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা তত উন্নত হবে। এক্ষেত্রে তোমার নিজের একটা পরিচয় সৃষ্টি হবে। এজন্য নিজের কাজ নিজে করে কমিউনিকেশন সৃষ্টি করতে পারদর্শী হও। ধরো তোমার পরিবার মাইক্রোবাস রিজার্ভ করবে। হাতে সময় থাকলে আরাম করে বসে থেকে অন্য কাউকে এটি করতে না দিয়ে নিজে গিয়ে কাজটি করো এবং এই কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষদের সাথে নিজের পরিচয় গড়ে তোলো।
এভাবে কমিউনিকেশনের মাধ্যমে নিজের একটা পরিচয় গড়ে তোলো। নিজের পরিচয়ই সবচেয়ে বড় পরিচয়। তাই নিজের পরিচয়ে বাঁচতে শিখো।

No comments:

Post a Comment