তুমি কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তান হয়ে থাকলে কিছু কাজ শেখার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় চর্চা করে অর্জন করতে হবে। তাহলে তুমি নিজের একান্ত দুঃসময়ে নিজে নিজে চলতে পারবে। নিম্নে সেসব নিয়ে আলোচনা করা হলো—
১. স্মার্ট হও : স্মার্ট না হয়ে আতেল হলে তুমি এই যুগে টিকতে পারবে না ও সবাই তোমাকে অবহেলার পাত্র বানাবে। স্মার্টনেস সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা আছে। তাই স্মার্টনেস বিষয়টাই এখন প্রথমে ব্যাখ্যা করি।
Smartness হলো Smart শব্দটির বিশেষ্যপদ। অভিধানের ভাষায় Smart শব্দটির বাংলা অর্থ— চৌকস; অর্থাৎ, একটি কাজে থাকা অবস্থাতেও চারদিকের সবকিছু সম্পর্কে যে সজাগ থাকে এবং কোনোকিছু খুব দ্রুত ধরে ফেলতে পারে তাকে স্মার্ট বলে।
অনেকের ধারণা স্মার্ট মানে হ্যান্ডসাম, কিন্তু এটা ভুল ধারণা। 'হ্যান্ডসাম' এবং 'স্মার্ট' এক জিনিস না, হ্যান্ডসাম মানে শুধু দেখতে সুন্দর, আর স্মার্ট মানে চটপটে। তবে শুধু চটপটে হলেই সে স্মার্ট না, কিছু ব্যক্তি আছে যারা শুধুই চঞ্চল কিন্তু সেই চঞ্চলতার মাঝে কোনো কোয়ালিটি নেই, এরূপ হলে তাকে স্মার্ট বলা যায় না; স্মার্ট বলা হয় কোয়ালিটিসম্পন্ন পারফেক্ট চঞ্চলতাকে; কিছু লোক আছে যারা শুধুই দ্রুত কিছু করতে ধরে ও তাড়াহুড়া করে বিভিন্ন জিনিস নষ্ট করে, এটা স্মার্টনেস নয় এটা অস্থিরতা। আবার যে শুধু দেখতে সুন্দর কিন্তু কোনো কাজ পারে না তাকে স্মার্ট নয় বরং সহজ বাংলা ভাষায় তাকে বলা হয় 'সুন্দর গাধা'।
আবার অনেকের ধারণা স্মার্ট মানে আভিজাত্যময়; পড়নের ও ব্যবহার্য সব জিনিস দামী দামী; ব্রান্ডের শার্ট, ব্রান্ডের প্যান্ট, ব্রান্ডের বেল্ট, ব্রান্ডের জুতা, ব্রান্ডের হাতঘড়ি, ব্রান্ডের সানগ্লাস, ব্রান্ডের মানিব্যাগ, ব্রান্ডের কলম, অ্যাপাসি বাইক ইত্যাদি। কিন্তু এটা স্মার্টনেস নয়, এটা আভিজাত্য। সময়ের কাজ সময়ে যে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারে তাকে স্মার্ট বলে। আর যে স্মার্ট সে সবসময়ই সচেতন ও যত্নশীল। এ দুটি গুণ না থাকলে স্মার্ট হওয়া যায় না; কোথাও বসার আগে অবশ্যই দেখতে হবে কার উপরে বসছি, কারো রুমে ঢুকেই ধপাস করে তার বেডের উপরে বসা যাবে না, বসার আগে দেখতে হবে বেডের উপরে তার ব্যবহৃত কোনো ছোট যন্ত্রপাতি আছে কি না, না দেখেই বসলে তা ভেঙ্গে যেতে পারে; রাস্তায় পথ চলার সময় মনোযোগ দিয়ে পথ চলতে হবে, এটাই সেই সময়ের স্মার্টনেস, পথ চলছো রাস্তার মোড়ে আর মন ঘুরে বেড়াচ্ছে মঙ্গল গ্রহে, হঠাৎ এক্সিডেন্ট করলে কিংবা কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেলে, এটা স্মার্টনেস নয়।
আর, বস্তুর ক্ষেত্রে 'Smart' মানে হলো বস্তুটি সুন্দর, অধিকতর/ বহুমাত্রিক ব্যবহার উপযোগী ও টেকসই। যেমন- স্মার্ট কার্ড, স্মার্ট ফোন ইত্যাদি।
২. অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব থেকে বেরিয়ে এসো: তুমি অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকলে এই বিশ্বায়নের যুগে লাইফে অনেক বিড়ম্বনায় পড়বে। কারণ এতে তুমি এই সময়ের অনেক কিছুর সাথে সুইট করতে পারবে না। তাই এই সময়ের সঙ্গে সুইটেবল হতে আপডেট হও। আর আপডেট হওয়ার একটাই উপায়- বহিঃমুখী হও। অন্যদের সাথে মিশো, তাদের ধ্যানধারণা ও মতামত দেখে নিজের ধ্যানধারণা ও চিন্তাভাবনাকে উন্নত ও কৌশলী করে তোলো। তোমাকে চিন্তাভাবনায় ও কাজে অন্য দশজনের থেকে এগিয়ে থাকতে হবে।
৩. ভালো কমিউনিকেশন দক্ষতা অর্জন করো: আজকের দিনে কমিউনিকেশন দক্ষতা একটি অপরিহার্য বিষয়। মতামত আদান প্রদান করা, কাউকে কোনোকিছুতে কনভিন্স করা আবার কারও কাছ থেকে কোনোকিছু জানা ও শেখা এসব ইন্টারএকশনে পারদর্শী হতে হবে। এ বিষয়ে আয়মান সাদিকের 'কমিউনিকেশন হ্যাকস' বইটি পড়তে পারো।
৪. অন্যকে মোটিভেট করতে শিখো: তোমার অন্যকে মোটিভেট করতে শিখতে হবে। এটা এক দুই দিনে হবে না। চেষ্টা করো— ধীরে ধীরে হবে। আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে একটা বিমা কোম্পানির চাকরিতে জয়েন করেছিলাম। সেই চাকরিতে আমি কোনো সফলতা অর্জন করতে পারি নাই। তবে সেই কাজ করতে গিয়ে আমি মানুষের সাথে গুছিয়ে কথা বলতে শিখেছি ও গুছিয়ে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে শিখেছি। প্রথম প্রথম পারতাম না, ধীরে ধীরে শিখেছি। এখন দেখো তোমাকে মোটিভেট করে আমি এই বইটা তোমার কাছে বিক্রি করেছি। আমি যদি তোমাকে মোটিভেট করতে না পারতাম তাহলে ফালতু জিনিস মনে করে তুমি এটা কিনতেই না। তাই তুমিও চেষ্টা করো, পারবে।
৫. ইংরেজি ও কম্পিউটারে দক্ষতা অর্জন করো: আজকের দিনে কোথাও কাজ পেতে ইংরেজি ও কম্পিউটারে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তুমি কমিউনিকেটিভ ইংলিশ তথা স্পিকিং ও বাংলা থেকে ইংলিশ ট্রানস্লেটিং করে কথা বলা শিখবে। লাইফ একাডেমির ইংলিশ প্রোগ্রামে খুব সহজে ইংরেজি শেখানো হয়। আর কম্পিউটারের যেসব জিনিস শিখবে সেসব হলো— অফিস প্রোগ্রাম, ফটোশপ, পাওয়ার পয়েন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ভিজুয়াল বেসিক এবং ইন্টারনেট ও ওয়েব মিডিয়া এর কাজ।
এই দুইটি জিনিস ভালোমতো শিখলে তোমার কাজের অভাব হবে না। কাজ করে শেষ করতে পারবে না। বহুবিধ কাজের সেক্টর তোমার জন্য খোলা থাকবে।
৬. কিছু কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখো: সময় ও বাস্তবতা জিনিসটা বড়ই অদ্ভুত। তোমার ভালো কম্পিউটার দক্ষতা ও ইংরেজি দক্ষতা থাকলেও হয়তো দেখা যাবে নিজস্ব কম্পিউটার না থাকায় সেসব দক্ষতা কাজে লাগাতে পারছো না। সেজন্য সেসব উপকরণ কেনার জন্য প্রথমে কিছু ওডজব করা লাগতে পারে। তাই কিছু ওডজব এর প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখো যেমন— ইলেক্ট্রিক মেকানিক, পাইপলাইন মেকানিক্স, আয়রন-লন্ড্রী, কার ড্রাইভিং ইত্যাদি। নিজের একান্ত দুর্দিনে এসব খুব কাজে দেয় এবং দুর্দিন কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হয়।
৭. Personal Resource Assessment: জীবনে উন্নতি করার জন্য ও নিজের স্বপ্নকে টিকিয়ে রাখার জন্য পারসোনাল রিসোর্স খুবই প্রয়োজন। প্রবাদে আছে— 'গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন'। এমনকি সেটা নিজের বাপের ধনসম্পদ হলেও সেটা কোনো কাজে আসে না। তাই অল্প বয়স থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট শুরু করে দাও। আর পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট কারা করবে ও কীভাবে করবে এ বিষয়ে এর পরের পাঠে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
৮. ভেবেচিন্তে সুক্ষ ও বাস্তববাদী পরিকল্পনা করতে শিখো: ভুল পরিকল্পনা ও বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যহীন পরিকল্পনা করা হলো লাইফের বড় ভুলোগুলোর একটি। তাই কোনোকিছুর পরিকল্পনা করলে তা বাস্তবিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনা করো। এ বিষয়ে 'পরিকল্পনা' অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
৯. উপস্থিত বুদ্ধি চর্চা করো: যেহেতু তুমি সংকট জোনে আছো ও এটা থেকে তোমাকে ওভারকাম করতে হবে তাই তোমাকে উপস্থিত বুদ্ধির অধিকারী হতে হবে। কারণ উপস্থিত বুদ্ধির অধিকারী না হতে পারলে হঠাৎ কোনো এক জায়গায় কোনো এক পরিস্থিতিতে তুমি আনস্মার্ট প্রমাণিত হবে ও তোমার ভ্যালু কমে যাবে। তাই সেরুপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে এবং বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে সহজে বাঁচার কৌশল রপ্ত রাখতে উপস্থিত বুদ্ধির চর্চা করো।
১০. ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলতে শিখো: এটি কমিউনিকেশন দক্ষতার একটি অংশ। যে কথা ডাইরেক্ট বলা যায় না, ডাইরেক্ট বললে তা অভদ্রতা হয়ে যায়; কিন্তু কথাটা বলা খুবই প্রয়োজন সেই কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে হয়। বিষয়টা ব্যাখ্যা করার জন্য একটা ঘটনা বলি। ডিপার্টমেন্টে আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন আমাদের এক বান্ধবীর বাবা মারা গেলো। বাবা মারা যাওয়ার সে খুব মুষড়ে পড়লো এবং আমাকে ফেসবুকে জানালো যে সে পড়াশুনা করতেই পারছে না; কী পরীক্ষা দিবে এই নিয়ে সে খুব উদ্বিগ্ন। আমি তাকে সাহস দেওয়ার জন্য বললাম, "আমাদের টিচাররা এমনিতেই খাতা অনেক লিবারেলি কাটেন, আর কেউ পরীক্ষাকালীন দূর্ঘটনায় পড়লে তার খাতা আরও বেশি লিবারেলি দেখেন"। সে বললো, "সেটা তো আমিও জানি, কিন্তু পরীক্ষা হয় কখন আর খাতা কাটে কখন, সেই সময়ে কি আর আমার দূর্ঘটনার কথা উনাদের মনে থাকবে, আর খাতায় তো নাম থাকে না শুধু আইডি নম্বর লেখা থাকে"। আমি বললাম, "তা ঠিক, তবে টিচাররা চাইলে একটা চিরকুটে তোমার বিষয়টা লিখে তা তোমার খাতায় ভিতরে রিমাইন্ডার হিসেবে রাখতে পারেন, উনাদের বলে দেখবো"।
আমি মূলত তাকে একথা বলেছি ওকে একটু সাহস দেওয়ার জন্য যাতে ওর মনটা একটু হালকা হয়। কিন্তু আমি তো আর এই কথা টিচারকে সরাসরি বলতে পারি না; সেটা টিচারকে আদেশ করা হয়ে যায় আর তা অভদ্রতা হয়ে যায়। তাই আমি আমার প্রিয় টিচার চেয়ারম্যান স্যারকে ফোন দিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা শুরু করলাম। আমার নাম্বার সেভ করা ছিল বলে সালাম নেওয়ার পর তিনি বললেন, "হ্যা, অমুক বলো, কী খবর তোমার?" আমি বললাম, "স্যার, একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম, আবার বলা ঠিক হবে কি না সেটা ভেবে বলবো কি না তাও ভাবতেছি"। তিনি বললেন, "আরে কী এমন কথা, বলো বলো"। আমি বললাম, "স্যার, আমাদের ব্যাচের অমুকের তো বাবা মারা গেছে; ও মানসিকভাবে দূর্বল তাই ও পড়াশুনা করতে পারছে না, আর তাই কীভাবে পরীক্ষা দিবে তা নিয়ে আরও বেশি উদ্বিগ্ন"। স্যার বললেন, "হ্যা, সেরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক"। তখন আমি বললাম, "স্যার, আমি ওকে বলেছি, 'আমাদের টিচাররা এমনিতেই খাতা অনেক লিবারেলি কাটেন, আর কেউ পরীক্ষাকালীন দূর্ঘটনায় পড়লে তার খাতা আরও বেশি লিবারেলি দেখেন'। তখন ও বললো, 'সেটা তো আমিও জানি, কিন্তু পরীক্ষা হয় কখন আর খাতা কাটে কখন, সেই সময়ে কি আর আমার দূর্ঘটনার কথা উনাদের মনে থাকবে, আর খাতায় তো নাম থাকে না শুধু আইডি নম্বর লেখা থাকে'। তখন আমি ওকে সাহস দেওয়ার জন্য বলেছি, 'টিচাররা চাইলে একটা চিরকুটে তোমার বিষয়টা লিখে তা তোমার খাতায় ভিতরে রিমাইন্ডার হিসেবে রাখতে পারেন, উনাদের বলে দেখবো'। স্যার, আমি ওকে এটা বলেছি শুধু ওকে সাহস দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে বলবো সেজন্য নয়। আমি আপনাদের কাছে যেটা বলবো সেটা হলো টিচারদের পক্ষ থেকে কেউ যদি ফোন করে ওকে একটু সাহস দিতেন সেটা অনেক ভালো হতো"।
স্যার বললেন, "ও হ্যা, ঠিক বলছো, আমাকে ওর ফোন নাম্বারটা এসএমএস করে দাও তো"। আমি মনে মনে ভাবলাম এটাই তো আমি চাচ্ছিলাম। যাহোক, আমি স্যারকে ওর নাম, ব্যাচ ও ফোন নাম্বার লিখে মেসেজ দিলাম।
*এই বই যাদের জন্য লিখেছি তাদের বাইরে বেশি পণ্ডিত যারা পড়ছেন তারা এই 'চিরকুট রিমাইন্ডার' তত্ত্বটা নিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু করবেন না; এটা যে অনৈতিক আবেদন তা আমিও জানি। এটা বলা হয়েছে শুধু একটি ভালো সম্পর্ক রাখা ও কথাটি ইনিয়ে বিনিয়ে বলার কৌশল হিসেবে।
যাহোক, তুমি কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তান হয়ে থাকলে লাইফে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলার প্রয়োজন হতে পারে। তাই শিল্পটির অনুশীলন করো।
১১. স্বার্থপর হতে শিখো: স্বার্থপর হওয়া বলতে আমি অন্যের ক্ষতি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করার কথা বলছি না; এটা দ্বারা আমি কী বলতে চাচ্ছি তা অনুধাবন করার চেষ্টা করো।
প্রত্যেকের জীবনেই একটা সংকটময় সময় আসা ভালো, কারণ এতে করে কাছের মানুষগুলোর মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা আসল রূপটা দেখা যায় ও জীবনের বিষয়ে টেকসই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
তারাই ভাগ্যবান যাদের জীবনে এই সংকটকালটা উপযুক্ত সময়ে আসে। আর দেখা যায় শৈশবে দুষ্টু থাকা ছেলেগুলো ভাগ্যবান হয়; কারণ তারা অল্প বয়সে ভুল করে ও এর দ্বারা বুঝে যায় তার ফ্যামিলি তার প্রতি ডেডিকেটেড নাকি কনজারভেটিভ এবং সেই মাফিক লাইফ সাজিয়ে নিতে পারে।
হতভাগা হলো ভদ্র ছেলেগুলো; কারণ তাদের লাইফে এই সংকটকালটা এমন এক সময়ে আসে যখন আর নতুন করে লাইফ সাজিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় সুযোগ খুব একটা থাকে না।
একটা রূঢ় সত্য হলো জগতের প্রতিটি মানুষেরই একটি অসাধারণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকে। আর এই শক্তির নাম হলো স্বার্থ; এটা শুনতে যতো অভদ্র কথাই হোক! সত্য বড়ই নিষ্ঠুর!
তাই কখনওই নিজেকে ততটা বেশি সেক্রিফাইস করে ক্ষয় করবে না, যতটা করলে দুঃসময়ে কাছের মানুষগুলো অবহেলা করলে নিজেকে আর সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকে না।
তোমার যদি কোনো স্লো ইফেক্ট রোগ হয়ে থাকে (যেমন- প্রস্টেট সমস্যা, টিউমার ইত্যাদি) তাহলে ফ্যামিলি যত অর্থিক সংকটের অজুহাতই দেখাক না কেনো সেটার চিকিৎসার জন্য ছলে বলে কৌশলে যেভাবেই হোক ফ্যামিলি থেকে টাকা নিয়ে চিকিৎসা করাবে। তেমনি তুমি যদি কোনো সম্ভাবনাময় কাজের প্রশিক্ষণের সুযোগ পাও সেটার জন্যও একইভাবে ফ্যামিলি থেকে টাকা নিয়ে প্রশিক্ষণ নিবে। এসব বিষয়ে কোনো সেক্রিফাইজ করবে না। কারণ একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে ফ্যামিলির জন্য তুমি কী কী সেক্রিফাইজ করেছো সেসব কেউ দেখবে না, সেসবের কোনো মূল্যায়নও করা হবে না। বরং সেই বয়সে ফ্যামিলিকে তোমার কী কী দেওয়ার কথা, তার কী কী দিতে পেরেছো ও কী কী পারো নাই শুধু সেসবের মূল্যায়ন করা হবে। আর কোনোকিছু তুমি কেনো পারো নাই সেই কেনো'র উত্তর কেউ জানতে বা বুঝাতে চেষ্টা করবে না, মূল্যায়ন শুধু একটাই- তুমি পারো নাই।
আর হ্যা আরও একটা রূঢ় সত্য হলো তুমি চাইলেও পালিয়ে বাঁচতে পারবে না, কারণ মানুষ তার দায়িত্ব ভুলে গেলেও অধিকার কিন্তু ঠিকই মনে রাখে; সে তার প্রাপ্য ফেরৎ চাইবেই, তা ফেরৎ দেওয়ার মতো শারীরিক, আর্থিক ও ভাগ্যগত সামর্থ্য তোমার থাক আর নাই থাক।
তাই বাঁচতে চাইলে স্বার্থপর হওয়ার চেষ্টাও চর্চা করো। জানো তো- 'সারভাইভাল অব দ্যা ফিটেস্ট!'।
১২. পাল্টিবাজি মারতে শিখো: প্রথমেই বলে নিই এই কাজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও শুধুমাত্র শেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে; আর সেজন্য কিছু পূর্বপ্রস্তুতিও থাকতে হবে। এর অপব্যবহার করলে রাখাল ও বাঘের গল্পের মতো দশা হবে। যখন দেখবে আশেপাশের সব মানুষ তোমার সাথে পাল্টি মারছে তখন আর তুমি স্থির থেকে টিকতে পারছো না তখন টিকে থাকার তাগিদে পরিমিত মাত্রায় পাল্টি মারতে শিখো। আর এই পাল্টি মারার বিষয়টি ব্যক্তিগত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
এসব তো করবেই এছাড়াও আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখবে; নিম্নে সেসব বিষয়ের দু'একটি তুলে ধরলাম—
প্রথমত, একই সময়ে একই কাজের দ্বারা সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করবে না, সেটা করতে গেলে সেই বাপ-ছেলের গাধা বিক্রি করতে যাওয়ার গল্পের মতো হবে। কিছু মানুষ কোনো বিষয়ে অখুশি থাকবেই, সেটা নিয়ে ভাবলে সমস্যায় পড়বে।
সেই গাধা বিক্রি করতে যাওয়ায় গল্পটা হলো→
একদিন বাপ আর ছেলে একটি ছোট গাধা বিক্রি করতে যাচ্ছিল। তারা দুজন ও গাধা সকলেই হেটে যাচ্ছিল। এটা দেখে কিছু লোক বলল, "গাধার চেয়ে এরাই তো দেখি বড় গাধা, গাধা রেখে নিজেরা হেটে যাচ্ছে"। একথা শুনে তাদের ভাবান্তর ঘটলো; তবে গাধাটি ছোটো ছিল বলে বাবা ছেলেকে গাধার পিঠে তুলে দিয়ে নিজে হেঁটে যেতে লাগলো। কিছুদূর গিয়ে একটা জায়গায় কিছু লোকের মধ্যে একজন বলে উঠলো, "ওই দেখ, তোকে না বলেছিলাম আজকাল ছেলেরা বাবাকে সম্মান করেনা, তুই তো আমার প্রতিবাদ করেছিলি; এখন চোখের সামনে তার প্রমাণ দেখ"। এটা শুনে ছেলে লজ্জা পেয়ে নামলো ও বাবা গাধার পিঠে উঠলো। কিছুদূর গিয়ে কিছু মহিলা বলে উঠলো, "বুড়ো বাপের দেখো বিবেক, ছোট ছেলেকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর নিজে চড়ে যাচ্ছে"। এতো সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে তারা এবার গাধাটা যে ছোটো সেই চিন্তা ছেড়ে দিয়ে দুজনে গাধার পিঠে চড়লো। গাধাটা ছোট হওয়ায় তা বেমানান দেখাচ্ছিল। এবার একজন লোক রেগে গিয়ে বললো, "পাষাণ্ড কাণ্ডজ্ঞানহীন তোরা, এতো ছোটো গাধার পিঠে দুজন চড়েছিস; এখন গাধাকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত; এবার তোরা গাধাকে বেধে চাঙ্গে তুলে নিয়ে দুজন দুপাশে লাঠি কাঁধে করে নিয়ে যা। একথা শুনে তারা আশেপাশের বাড়ি হতে চাঙ ও লাঠি যোগাড় করে গাধাকে পা বেঁধে চাঙ্গে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। এবার সাঁকো পার হতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পানিতে পড়ে গাধা মারা গেলো।
যাহোক এ গল্পের মূল শিক্ষা হলো, সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করো না; নিজের সুস্থ চিন্তা থেকে যেটা ভালো মনে করো সেটা করো।
দ্বিতীয়ত, সেই কয়েক অন্ধের হাতি দেখার গল্পের মতো সেসব ব্যক্তি কোনো জিনিসের ১০% জেনেই তাতে কমেন্ট করে সেসব লোকের উপর কোনেরূপ ভরসা করবে না। কারণ তাদের কোনো কোয়ালিটি নেই। তারা ক্ষণেক্ষণে রূপ বদলায়; তারা কয়েক প্রকারের কথা বলে। এরূপ লোকের আরও একটি বাজে বৈশিষ্ট্য হলো- এরা প্রায়ই এরূপ যুক্তি দেখায়- অমুকের ছেলে এই করেছে, সেই করেছে, তুমি কী করেছো? তারা এটা খতিয়ে দেখে না যে অমুক তার ছেলের সেই জায়গায় যাওয়ার জন্য কতোটা সাপোর্ট দিয়েছে আর আমি কতোটা সাপোর্ট দিয়েছি। তাই এই জাতীয় লোক তোমার খুব কাছের মানুষ হয়ে থাকলেও সে তোমার জন্য সহায়ক হবে সেই আশা একদম ছেড়ে দিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখো।
আরও কিছু বিষয় আছে যা এই বইয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে এই বয়সে তা তোমাদের কাছে হয়তো দুর্বোধ্য হবে। তাই লাইফ একাডেমির পরামর্শ ডেস্কে এসে পরামর্শ ফি দিয়ে সেসব খুব সহজে জেনে নিতে পারবে।
সুতরাং—
বাঁচতে হলে শুধু নিজের জন্যই বাঁচো
এবং মরতে হলেও শুধু নিজের জন্যই মরো
কারণ এই পৃথিবীতে সবাই সফলতার কৃতিত্বের অংশীদার হতে চায়
কিন্তু কেহই ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করতে চায় না।
No comments:
Post a Comment