পরিকল্পনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি বেসিক ফান্ডামেন্ট হলো টাইম ম্যানেজমেন্ট। আর টাইম ম্যানেজমেন্ট কোনো এলোমেলো অগোছালো বিষয় নয়। একটি সফল টাইম ম্যানেজমেন্ট নির্ভর করে ব্যক্তিগত পরিস্থিতির উপরে। তাই টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে হলে নিজের পরিকল্পনার ফিচারগুলোর উপরে একটি বুদ্ধিদীপ্ত সময় বণ্টন করতে হবে। এক্ষেত্রে লাইফ একাডেমির অ্যাডভাইস ডেস্ক তোমাকে হেল্প করতে পারে। আর তুমি চাইলে নিজেও একটু পরিষ্কারভাবে চিন্তা ভাবনা করে একটি ভালো টাইম ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান করতে পারবে। আর এক্ষেত্রে একটি বই তোমাকে হেল্প করবে; ব্রায়ান ট্রেসির লেখা এবং মোহাম্মদ রাশেদুল হক ও ফজলে রাব্বি এর বাংলায় অনুবাদ করা 'টাইম ম্যানেজমেন্ট' বইটি পড়তে পারো। আর টাইম ম্যানেজমেন্ট এর ক্ষেত্রে আমার নিজস্ব কিছু পরামর্শ নিম্নরূপ—
১. কোনো কাজে একবারে উপযুক্ত সময় দিয়ে একবারেই সুন্দরভাবে শিখে ফেলবে: লাইফের ফানডামেন্টাল কাজগুলো শুরু থেকেই সুন্দরভাবে করো। লাইফের কোনো ফানডামেন্টাল কাজ দায়সারাভাবে করবে না; যেমন ধরো তুমি এসএসসি পরীক্ষার জন্য ইংরেজি গ্রামার এবং ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং বিষয়টি দায়সারাভাবে পড়লে, তাহলে এইচএসসিতে বিষয়টি তোমাকে আবার পড়তে হবে; এখন এখানে দায়সারাভাবে পড়লে অ্যাডমিশনের জন্য আবার শুরু থেকে ডিপলি পড়তে হবে, এখানে ভালো করে না পড়লে আবার চাকরির পরীক্ষার জন্য রুট লেভেল থেকে পড়তে হবে। মোটকথা, লাইফের কোনো ফানডামেন্টাল কাজ দায়সারাভাবে করে পার পেয়ে যাওয়ার উপায় নাই। তাই লাইফের ফানডামেন্টাল কাজগুলো সিরিয়াসলি নিয়ে শুরু থেকেই ঘরের ভিত্তি দেওয়ার মতো ভালোভাবে করবে যেনো একই কাজ বারবার শুরু থেকে শুরু করতে না হয়; যেনো একটা অংশ কমপ্লিট থাকে। এরপর শুধু তার উপরে ইট গাঁথার মতো উঁচু লেভেলের একস্ট্রা কাজটুকু শিখলেই হয়। তেমনি দৈনন্দিন কাজগুলোও মনোযোগ দিয়ে গুরুত্ব সহকারে সুন্দরভাবে করবে; তাড়াহুড়ো কাজ কিংবা দায়সারা কাজ কোনো ভালো ফল দেয় না। তাই কাজগুলো একেবারেই ভালোভাবে করতে হবে। এটা টাইম ম্যানেজমেন্ট এর একটি অন্যতম ফান্ডামেন্ট।
২. টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে স্মার্ট হও: স্মার্ট হওয়া টাইম ম্যানেজমেন্ট এর একটি অন্যতম উপায়। একটা গল্প ছোট করে বলি। এক পেয়াদা রাজাকে প্রতিদিন বলতো, "আমার বেতনটা নায়েব সাহেবের সমান করলে ভালো হয়, কারণ নায়েব যত ঘণ্টা কাজ করে, আমিও তত ঘণ্টাই কাজ করি"। রাজা এই আবদারের জবাব দেওয়ার জন্য একদিন রাজ্য ভ্রমণের সময় বললো, "আচ্ছা, যাও ওই যে বিয়ের গাড়িটা যাচ্ছে ওখানে গিয়ে তুমি শুনে আসো কাদের বিয়ে হচ্ছে"। আর রাজা একই কাজে নায়েবকেও পাঠালেন। পেয়াদা দৌড়ে গিয়ে বরযাত্রীদের কাছ থেকে শুধু শুনে এলো বরের নাম ও গ্রাম এবং কোন গ্রামে বিয়ে করতে যাচ্ছে সেই গ্রামের নাম। রাজা যখন জানতে চাইলেন কনের নাম ও বর-কনে উভয়ের বাবার নাম, তখন পেয়াদা আবার দৌড়ে গিয়ে কনের নাম ও বর-কনে উভয়ের বাবার নাম শুনে এলো। তখন যখন রাজা বর ও কনে উভয়ের বংশপরিচয় ও বিয়ের দেনাপাওনার বিষয়ে জানতে চাইলেন তা জানতে যাওয়ার জন্য পেয়াদা আবার দৌড় দিতে যাবে তখন রাজা তাকে থামালেন এবং নায়েবও সেইমাত্র এসেছে। তখন নায়েব রাজার সামনে বিয়ের বর-কনের নাম, উভয়ের বাবার নাম, উভয়ের গ্রামের নাম, উভয়ের বংশপরিচয়, বিয়ের দেনমোহর ইত্যাদি সব তথ্য বলে দিলেন। তখন রাজা পেয়াদাকে বললেন, "তুমি কি বুঝতে পারছো তোমার বেতন নায়েবের থেকে কম কেনো?"। তুমি বিয়ে সম্পর্কে দুইটা তথ্য জানার জন্য দুইবার দৌড়াদৌড়ি করলে আবার আর একটা তথ্যের জন্য দৌড় দিতে যাচ্ছিলে, আর নায়েব সাহেব একবার গিয়েই বিয়ে সম্পর্কে সব তথ্য নিয়ে এসেছেন। সে তোমার চেয়ে দৌড়াদৌড়ি কম করেছে কিন্তু তোমার চেয়ে অনেক বেশি স্মার্টলি কাজটা করেছে।
তাই গাধার মতো বুদ্ধিহীন খাটুনি নয়, বরং তুমি স্মার্ট হলে টাইম সেভ করতে পারবে।
স্মার্ট লাইফস্টাইলের কিছু বৈশিষ্ট্য—
ক) কোনো বিষয়ে কোথাও গেলে সেই বিষয়ে বিস্তারিত খুঁটিনাটি সব জেনে নিবে।
খ) কোনো প্রতিষ্ঠানে গেলে তাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের ভিজিটিং কার্ড কিংবা ফোন নাম্বার এবং ডিজিটাল পরিচিতি তথা ই-মেইল, ওয়েব অ্যাড্রেস, ফেসবুকে পরিচিতি নিয়ে আসবে যেনো পরবর্তীতে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারো।
গ) ইংরেজদের একটি অভ্যাস হলো কোথাও যাওয়ার আগে একটি ফোন করে নিশ্চিত হয়ে যাওয়া। তোমারাও এটা করো যেনো ওখানে গিয়ে ফেরৎ আসতে না হয়, কিংবা কারও জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করে সময় ব্যয় করতে না হয়।
ঘ) ফোনে কিছু দরকারি জিনিসপত্র যেমন ই-বুক কিংবা অন্যান্য কিছু রাখো কিংবা ব্যাগে করে নিয়ে যাও যেনো কোনো বিষয়ে কোথাও অপেক্ষা করতে হলে সেই সময়টা ফাও না কাটে। ইংরেজরা টয়লেটে গেলেও নিউজপেপার হাতে করে নিয়ে যায়।
৩. বড় বড় কাজের ফাঁকে ছোট কাজ করা : এই বিষয়টি আমি একটি ভিডিওতে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম। ধরে নাও একজন দক্ষ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি একটি স্বচ্ছ প্লাস্টিকের পাত্রে কিছু পাথর এবং কিছু পরিমাণ বালি বুদ্ধিদীপ্তভাবে পরিপূর্ণ করেছিল এরপর সে সেগুলো পাত্রটি হতে বের করে এনে তোমাকে বললো সেই পাথরগুলো এবং বালিটুকু দিয়ে পাত্রটি পরিপূর্ণ করতে এবং কোনো বালি বা পাথর যেনো পাত্র ভরানোর পরে বেশি না হয়। এখন তুমি যদি প্রথমেই বালিগুলো দিয়ে পাত্রটির অর্ধেক পূর্ণ করো তাহলে তুমি পাথরগুলোর সবগুলো পাত্রটিতে রাখতে পারবে না, কিছু পরিমাণ পাথরের টুকরো বেশি হবে। এজন্য তোমাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো প্রথমে পাথরের টুকরোগুলো সবগুলো পাত্রটাতে ভরতে হবে, এরপর তার উপরে একটু করে বালি দিতে হবে এবং পাত্রটি ঝাঁকুনি দিতে হবে; এভাবে বালিগুলো পাথরের টুকরোগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে গিয়ে পাত্রটি সুন্দরভাবে পরিপূর্ণ হবে, ফলে কোনো পাথর কিংবা বালি বেশি হবে না। টাইম ম্যানেজমেন্ট বিষয়টাও এরূপই। তোমাকে সেই পাত্রের আয়তনের মতো একটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সময়ের মধ্যে দক্ষতার সাথে সব কাজ শেষ করতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হয়ে কাজ বাকি পড়ে থাকার মতো বিষয় যেনো না ঘটে। এক্ষেত্রে ওই একই প্রকারের একটি কৌশল হলো বড় কাজগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ছোট কাজ করা। যেমন- আমি চতরাপিডিয়া অ্যাপস মার্কেটিং করার জন্য গ্রামে গ্রামে এবং বিভিন্ন বাজারে ও লোক সমাগমের পয়েন্টে যেতাম। এক্ষেত্রে আমি আমার নিজের গ্রামে কখনও অ্যাপস সাপ্লাইয়ের জন্য একটি বড় সময় নিয়ে বের হতাম না। সকালবেলা যখন ভাত রান্না হতে দেরি হতো তখন গ্রামে বের হয়ে দুই চারজনের কাছে অ্যাপস সাপ্লাই দিয়ে আসতাম, ততক্ষণে ভাত রান্না হয়ে যেতো; তারপর ভাত খেয়ে বিভিন্ন দূরের স্থানে অ্যাপস মার্কেটিংয়ে বেরিয়ে পড়তাম।
এভাবে তুমিও বাসায় কিংবা অফিসে এরূপ ছোট ছোট কাজগুলো বড় বড় কাজের ফাঁকের সময়গুলোতে করে একটি ফলপ্রসূ টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে পারো।
৪. সবাইকে সময় দিও না, কিছু মানুষকে 'না' বলতে শিখো : সবাইকে সময় দিয়ে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে সবাইকে হ্যাঁ বললে তুমি তোমার সময়ের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার তথা সর্বোচ্চ প্রোডাক্টিভ ব্যবহার কখনওই করতে পারবে না। তাই তোমার সময়ের প্রডাক্টিভ ব্যবহার করতে কিছু মানুষকে 'না' বলতে শিখো। সবার সব কাজে সাহায্য করতে গিয়ে সময় ব্যয় করলে নিজের জন্য সময় সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে উঠবে না, তোমার পরিকল্পনাকৃত কাজগুলোও এগিয়ে নিতে পারবে না। তাই কাউকে ফিরিয়ে দিলে নিজের ভেতর যে খারাপ লাগা কাজ করে ধীরে ধীরে এটাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠো ও নিজের জন্য সময়ের সদ্ব্যবহার করতে শিখো।
৫. ফাও লোকের পিছে সময় দেওয়া বন্ধ করে দাও : ফাও মন্তব্যকারীর সাথে যুক্তিতর্ক করে সময় ব্যয় করা কিংবা ফাও বন্ধুকে সময় দেওয়া এসব পুরোপুরি ছেড়ে দাও। ফাও মন্তব্যকারী মানে হলো যারা কোনো বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি না জেনেই সে বিষয়ে ১০% জেনে কমেন্ট করে তারা। এদের সঙ্গে তর্ক করে যদি তুমি ১০ মিনিট সময় ব্যয় করো তাহলে ওই ১০ মিনিট কিন্তু তোমার লাইফ থেকে অহেতুক চলে গেলো। সুতরাং তুমি কেনো এই ফাও লোকগুলোকে তোমার লাইফ থেকে সেই ১০ মিনিট সময় দিবে? ওরা যা মন্তব্য করে করুক, তুমি তোমার কাজের মানোন্নয়ন করতে তোমার সময়কে ব্যয় করো। আর ফাও বন্ধু মানে হলো যেসব বন্ধু দায়িত্ব এড়াতে জ্ঞান দেয় কিংবা শুধু মিথ্যা আশ্বাস দেয়, কাজের মানোন্নয়নে কোনো হেল্প করে না। যেমন ধরো তুমি এলাকায় একটি ব্যবসা শুরু করেছো এবং তুমি তোমার আসেপাশের গ্রামের এক বন্ধুকে বললে, "বন্ধু, আমি তো এলাকায় এই ব্যবসা শুরু করেছি, তুই একটু তোমার গ্রামটাকে কাভার করে আমাকে হেল্প কর, তুই আমার এই ভিজিটিং কার্ডটি/ আমার ব্যবসার এই তথ্যটি তোর গ্রামে সাপ্লাই করে দে"। এক্ষেত্রে যদি দেখা যায় ব্যবসাটি একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা হওয়া সত্ত্বেও সে এই বন্ধুত্বের দায়িত্বটুকু এড়ানোর জন্য বলে বসলো— 'বন্ধু, এই ব্যবসা এলাকায় ভালো চলবে না' কিংবা "এই ব্যবসা করে কী করবি? অন্য কিছু কর" কিংবা সে আড্ডাবাজিতে মেতে থাকা ফ্রি মানুষ হওয়া সত্ত্বেও বললো, 'আমার হাতে সময় নেই' কিংবা দেখা গেলো সে বললো, "ও আচ্ছা, ভালো, আমি আমার গ্রামের সবাইকে বলবো"। কিন্তু বাস্তবে সবাইকে তো দূরের কথা, একজনকেও বলে না; শুধু তোমাকে সন্তুষ্ট করার জন্য মুখের উপরে ফাও সম্মতি দেয়। এসব হলো ফাও বন্ধু। এসব বন্ধুকে সময় দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
এছাড়াও টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে প্রজেক্টের কাজে এবং দৈনন্দিন কাজে পারফেক্ট কৌশল প্রয়োগ করতে শিখতে হবে। কোনো কাজে সফল হতে না পারার যেমন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো— বিশ্বাসের ভুল, পরিকল্পনার ভুল এবং কৌশলের ভুল তেমনি টাইম ম্যানেজমেন্ট এর ক্ষেত্রেও তুমি কোনো কাজ ভুল কৌশলে করলে অযথা সময় বেশি ব্যয় হবে। তাই ভেবেচিন্তে একটি পারফেক্ট কৌশল প্রয়োগ করে কাজটি করো, ফলে টাইম সেভ হবে। এ বিষয়ে অ্যাডভান্সমেন্ট অধ্যায়ে কিছু ভালো উদাহরণ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পাবে।
চাকরি এবং ব্যক্তিগত পরিচিতির জন্য অনলাইন সিভি এবং ডিজিটাল প্রোফাইল বুক তৈরি করতে চাও?
তাহলে একটি নমুনা প্রোফাইল দেখতে এখানে—ক্লিক—করো।
Let's be Excellent! | Mahadi Hasan
No comments:
Post a Comment