একজন কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তানের উচিৎ ১৬ বছর বয়স থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করে অর্থ সঞ্চয় করা শুরু করা। এক্ষেত্রে টিউশনি একটি জনপ্রিয় পন্থা। টিউশনি কোনোভাবেই পাওয়া না গেলে পার্টটাইম জব করে অর্থ সঞ্চয় শুরু করতে হবে।
তুমি দুর্দিনে এসে টিউশনি খুঁজলে হঠাৎ করে টিউশনি পাবে না। আর টিউশনি খোঁজার বিষয়ে অনলাইনের লেখা কিংবা ইউটিউবের ভিডিওতে যেসব সুন্দর ও সুস্বাদু পরামর্শ পাবে সেসবের অধিকাংশই অকার্যকর পদ্ধতি যা শুধু তোমাকে মুগ্ধ করার জন্য বলা হয়ে থাকে, বাস্তবে সেসব পদ্ধতি ফল দেয় না। যেমন- দেয়ালে "পড়াতে চাই" এর পোস্টার লাগানো। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে এই পদ্ধতি বেশ ভালো ফল দিতো; কিন্তু এখন এটা করে তেমন একটা ফল মেলে না, এর কারণ হলো অভিভাবকরা বিশ্বস্ত সুত্রে কারো রেফারেন্স ধরে টিউটর নিতে চায় আর আজকাল আবাসিক এলাকাগুলোতে এতো বেশি পরিমাণে "পড়াতে চাই" এর কাগজ লাগানো থাকে যে সেখান থেকে তোমাকেই যে একজন অভিভাবক সিলেক্ট করবে এরূপ কোনোই নিশ্চয়তা নাই। আবার অন্যকেউ তার পোস্টার লাগানোর সময় তোমার পোস্টার ছিঁড়েও ফেলতে পারে, তুমি তো আর সেখানে পাহাড়ায় থাকবে না। আমি মাস্টার্স এ পড়ার সময় একটা ক্লাস ওয়ান এর বাচ্চার টিউশনি পেয়েছিলাম; শহরের মূল রোড হতে সেই বাড়ির গলির যে ৩০০ গজ দূরত্বের পথ সেটাতেই প্রায় ১০ জনের "পড়াতে চাই" পোস্টার ছিল। কিন্তু আমি টিউশনিটা পেয়েছিলাম রেফারেন্স ধরে।
তাই টিউশনি পেতে তোমার যে বন্ধু কিংবা বড়ভাই টিউশনি পেশায় খুব বেশি জনপ্রিয় তার কাছে বলে একটা টিউশনি জোগাড় করে নাও। এরূপ কাউকে বলার পর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তথা পরের মাসেই তুমি টিউশনি পেয়ে যেতে পারো। আর যদি না পাও তাহলে বুঝে নেবে সে আসলে তোমার জন্য কিছুই করে নাই, মুখের উপরে "পারবো না" বললে তুমি কষ্ট পাবে বলে শুধুই তোমাকে 'হবে হবে' বলে আশ্বাস দিয়েছে। এজন্য কয়েকজন বন্ধু ও কয়েকজন বড়ভাইকে বলে রাখো এবং তাদের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখো। শুধু দু'একজনের উপর ভরসা করে থাকবে না।
আরেকটা বিষয় হলো তুমি যদি এসএসসি থেকেই মানবিকে পড়া ছাত্র হয়ে থাকো তাহলে তোমার টিউশনি পাওয়ার স্পেসটা খুবই সীমিত। তুমি এক্ষেত্রে ছোট বাচ্চাদের টিউশনি পেতে পারো আর এটা খুব সীমিত একটা সুযোগ। তাই বুঝতেই পারছো এক্ষেত্রে সময় বেশি লাগবে। আর এক্ষেত্রেও অন্যদের রেফারেন্সে টিউশনি পাওয়াটাই বেশি ফলপ্রসূ কারণ আজকাল সবাই বিশ্বস্ত রেফারেন্স থেকেই টিউটর নিতে চায়। এর কারণ হলো অনেক বাসা ছিনতাইকারী কিংবা শিশু অপহরণকারী টিউটর সেজে শিশুকে পড়াতে গিয়ে গল্পচ্ছলে শিশুদের সরলতার সুযোগে শিশুদের কাছ থেকে বাসা সম্পর্কে তথ্য নিয়ে ওই বাসার নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা হ্যাক করে ফেলে কিংবা অনেক ক্ষেত্রে শিশুকেই ভুলিয়ে ভালিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে থাকে। তাই তুমি শিশুকে পাড়ানোর জন্য পোস্টার লাগিয়ে সফল হবে এই ভাবনা ছেড়ে দিয়ে রেফারেন্সে শিশুর টিউশনি পাওয়ার চেষ্টা করো এবং কয়েকজন বন্ধু ও বড়ভাইকে বলো। আর শুধু শ্যালশ্যালাভাবে বললেই হবে না, তাদের সাথে যোগাযোগ রাখো। এসব বিষয়ে সাফল্যের মূল শর্তই হলো কমিউনিকেশন এর শক্তি।
আর যদি কয়েকজকে বলেও ফল না হয় তাহলে কোনো বিশ্বস্ত ও খাঁটি টিউশন মিডিয়ায় গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে তাদের মাধ্যমে টিউশনি নিয়ে নাও। টাকা খরচ হলেও এতে কাজ হবে এটাই ভরসা। তবে আগে খোঁজখবর নিয়ে দেখো টিউশন মিডিয়াটা রিয়েল কিনা।
পার্টটাইম জব বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমেই একটা কথা বলতে হয় সেটা হলো পার্টটাইম জব বিষয়ে তরুণদের একটি কাল্পনিক ও ভুল ধারণা আছে তা হলো এসব তরুণেরা ভেবে থাকেন পার্টটাইম জব মানে ফুলটাইম জব এর অর্ধেক কাজ করা অর্থাৎ ফুলটাইম জবে অফিসে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করতে হয়, তাহলে পার্টটাইম জব মানে কোনো অফিসে ফুলটাইম এর অর্ধেক সময় অর্থাৎ চার ঘন্টা কাজ করা। এটা প্রায় পুরোটাই ভুল ধারণা। এরূপ কোনো চাকরি বাজারে নেই বললেই চলে। এরূপ চাকরি বাজারে আছে ঢাকা শহরে অল্প কিছু আর অন্যান্য শহরে তা ২-৪% হবে। পার্টটাইম জব মানে তা ফিল্ডের জব হবে এবং তাতে টার্গেট কিংবা পারসেন্টেজ ভিত্তিতে সম্মানী নির্ধারিত হবে; এটাই হলো পার্টটাইম চাকরির বাজারের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এটা তরুণেরা জানেনা বলে অহেতুক আবেদন করে সেসব অফিসে গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে তারপর বিষয়টা বুঝতে পারেন। এভাবে তারা নিজেদের সময় যেমন নষ্ট করেন তেমনি নিয়োগদাতাদের সময়ও নষ্ট করে থাকেন।
একবার রংপুর শহরে একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়ে কিছু ছেলেকে নিয়োগ দেবো বলে ভাইভা নেওয়া শুরু করলাম। এতে তরুণদের ধ্যান ধারণা দেখে বেশ অবাক হলাম। ফিল্ডে কাজ করার ইচ্ছে তাদের নাই। তারা অফিসে বসে পার্টটাইম জব আশা করে। আর যারা ফিল্ডে কাজ করতে একটু একটু চায় তারা আবার বাইসাইকেল চালাতে চায় না। তারা কাজ করার আগেই ফিল্ডে ঘোরার জন্য রিকশা রিজার্ভ করার টাকা আশা করে এবং নাস্তা খরচ ও ফিক্সড বেতন আশা করে। যখন জানানো হয় যে, বেতন কিক্সট হবে না, যেমন পারফরমেন্স করবেন তেমন আয় করবেন তখন কেউ রাজি হয় না। করবে পার্টটাইম জব আর তাতে সুযোগ সুবিধা আশা করে সরকারি চাকরির মতো, যেটা একটা অবাস্তব প্রত্যাশা।
চাকরি সম্পর্কে এসব তরুণদের কোনো ধারণাই নাই। তারা চাকরি জিনিসটাকে পাশের গ্রামের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ খেলার মতো মজাদার জিনিস মনে করে থাকেন। কিন্তু চাকরি জিনিসটা মোটেও সেরকম কোনো জিনিস নয়। চাকরি মানে একটা কাজ। চাকরি করা মানে চুক্তির কিষাণ হিসেবে কাজ করা। চাকরিজীবী মানে সে একজন কিষাণ-কামলা; পার্থক্য শুধু গ্রামে জমিতে যারা কিষাণের কাজ করে তারা অশিক্ষিত কিষাণ আর যারা কোম্পানি কিংবা প্রাইভেট জব করেন তারা শিক্ষিত কিষাণ।
তাই চাকরি জিনিসটাকে যেসব তরুণেরা চকলেটের মতো মজাদার সুস্বাদু জিনিস মনে করো তারা আজকে মাথায় এটা ঘুমিয়ে নাও ও এই ভাবনাটা ইন্সটল করে রাখো যে চাকরি জিনিসটা তোতো ঔষধের মতো একটা জিনিস; এটাতে তুমি যত দ্রুত অভ্যস্ত হতে পারবে ততই তুমি অ্যাডভান্সড হয়ে উঠবে।
সেজন্য এটা জেনে রাখো যে, তুমি যদি সেই কাল্পনিক বিশ্বাস থেকে অফিসে বসে চারঘণ্টা কাজ করার পার্টটাইম জব খুঁজতে থাকো তাহলে শুধু খুঁজতেই থাকবে, পার্টটাইম জব আর পাবে না।
পার্টটাইম জব কোথায় কোথায় পাওয়া যায় সে বিষয়ে অনলাইনে কিংবা ইউটিউবে অনেক তথ্যমূলক লেখা ও ভিডিও পাবে।
আর পার্টটাইম জবে জয়েন করার ক্ষেত্রে কী কী বিষয়ে সচেতন থাকবে তা এই অধ্যায়ের তৃতীয় পাঠে জানতে পারবে।
No comments:
Post a Comment