Thursday, April 22, 2021

পাঠ—৪ বেসলেস অ্যাসপেকটেশন সমস্যা


আজ আমি একটা অসাধারণ তত্ত্ব ব্যাখ্যা করবো আমি যেটার নাম দিয়েছি "Baseless Expectation" বা ভিত্তিহীন প্রত্যাশা। আমরা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানেরা যে সমস্যাটা মাথায় নিয়ে জন্মাই ও সারাজীবন ঘাড়ে করে বয়ে নিয়ে বেড়াই সেটা হলো এই Baseless Expectation।
আমাদের শিক্ষাজীবনে স্কুল কলেজে শিক্ষকেরা ক্লাসে আমাদেরকে শেখায় ভাত রান্না করা, আর পরীক্ষার খাতায় তারা আশা করেন বিরানী। তাদেরকে এই বিরানী দিতে গেলে বাইরে এক্সট্রা প্রাইভেট পড়ে বিরানী বানানো শিখতে হয় যেটা উচ্চবিত্তের সন্তানেরা পারে আর মধ্যবিত্তের সন্তানেরা কিছুটা পারে কিছুটা পারেনা।
পরিবারও একই কাজ করে। তারা যে পরিমাণ সাপোর্ট দিতে পারে সেটা হলো ভাত রান্না করার চাল, আর তারা ফলাফল আশা করে বিরানী। ভালো মেধা থাকলে ও সেইসঙ্গে লাক সাপোর্ট করলে সেই বিরানী দেওয়া সম্ভব হয়, নয়তো হয় না। পরিশ্রম করলেই সফলতা আসে এই সুত্র সব জায়গায় সবসময় খাটে না।
আর আজ থেকে কয়েক বছর পর তরুণ প্রজন্মের আত্নহত্যার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে এই Baseless Expectation; এর বিভিন্ন দিক এখন তুলে ধরা যাক:—
প্রথমত, আমাদের সমাজের একটা বৈশিষ্ট্য হলো আমরা বাবা-মায়েরা যেটা পরি না সেটা সন্তানের উপর চাপিয়ে দেই; সন্তানের মাধ্যমে সেই ইচ্ছা পূরণ করতে চেষ্টা করি। এখন কথা হলো স্বপ্নের জায়গাগুলো তো আর সহজ হয় না, বরং দিন দিন তা কঠিন হচ্ছে, কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে। আর যারা সেই স্থানে গিয়েছিল তারাও তো চাইবে তাদের সন্তানেরা সেই স্থানটা ধরে রাখুক। আমরা যারা সন্তানের দ্বারা স্বপ্ন পূরণে আশাবাদী তারা হয়তো সন্তানের উপর বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছি, তবে আমরা মোট বিনিয়োগ বাড়িয়েছি প্রান্তিক হারে বাড়াইনি, অর্থাৎ আমাদের বাবা মা যে বিনিয়োগ আমাদের উপর করেছিল সেই মাত্রার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছি কিন্তু সেই পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারছি না যে পরিমাণ বিনিয়োগ যারা স্বপ্ন পূরণ করে তাদের সন্তানের দ্বারা সেই স্বপ্নের স্থানটা ধরে রাখার জন্য করছে।
দ্বিতীয়ত, পারসোনাল আবেগ। অনেক সময় দেখা যায় শক্তিতে দূর্বল হওয়ায় কেউ অন্যের অনেক অত্যাচার অনাচার সহ্য করে এবং স্বপ্ন দেখে তার সন্তান লেখাপড়া করে বড় হয়ে উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে এই অন্যায়ের বদলা নেবে; কিন্তু এটা নিতান্তই পারসোনাল আবেগ। বাস্তবতার কাছে পারসোনাল আবেগের কোনো মূল্য নেই।
তৃতীয়ত, কষ্টের আবেগ। যেহেতু মধ্যবিত্ত অভিবাবকেরা কষ্টের ইনকামের টাকা সন্তানদের উপর ব্যয় করেন তাই তাদের আবেগটা একটু বেশি। কিন্তু বাস্তবতার কাছে এটাও নিতান্তই তুচ্ছ আবেগ। টাকা তো টাকাই, সেটা কষ্টের টাকা হোক আর ঘুষের টাকা হোক, বাজারে সব টাকা মূল্য একই; কষ্টের টাকায় তো আর আলাদা সিল মারা থাকে না। তাই বাস্তবতার কাছে এই আবেগও মূল্যহীন।
চতুর্থত, প্রতীক্ষার আবেগ। অনেক মধ্যবিত্ত অভিবাবকের ইচ্ছা তার ছেলে লেখাপড়া শেষ করেছে, এবার সে চাকরি করে বাড়ি করবে তারপর বিয়ে করবে। তারা ভাবে ছেলেকে এতদূর লেখাপড়া না করালে এতদিন সে মাঠে কাজ করে কিংবা গার্মেন্টসে চাকরি করে যে ইনকাম করতো ও লেখাপড়ায় ব্যয় হওয়া যে অর্থটা সেভ হতো তাতে বাড়ি করা হয়ে যেতো। তাদের প্রত্যাশাটা যৌক্তিক আছে, কিন্তু এতে একটা রূঢ় দাবিত্ব আছে। এই সময়ে সাধারণ কোনো চাকরি করে টাকা জমিয়ে বাড়ি করতে চাইলে ৬ বছর সময় লাগে। তাই দেখা যায় এই ইচ্ছা পূরণ করতে গেলে ছেলেটার কোনো প্রেমিকা থাকলে তাকে হারাতে হয়। প্রেমিকা হারানোর কষ্ট অভিবাবকেরা কোনোদিন বুঝবেন না। হয়তো সে বিয়ে করে শহরে ভাড়া বাড়িতে থাকতো ও ধীরে সুস্থে অভিবাবকের ইচ্ছা পূরণ করতো। কিন্তু পাশের বাড়ির আবুলকে ভালো বাড়ি করতে দেখে সেই ধৌর্য আর অভিবাবকের থাকে না।

No comments:

Post a Comment