Thursday, April 29, 2021

তুমি কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তান হয়ে থাকলে নিজেকে টিকে রাখতে করণীয়


তুমি কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তান হয়ে থাকলে কিছু কাজ শেখার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় চর্চা করে অর্জন করতে হবে। তাহলে তুমি নিজের একান্ত দুঃসময়ে নিজে নিজে চলতে পারবে। নিম্নে সেসব নিয়ে আলোচনা করা হলো—

১. স্মার্ট হও : স্মার্ট না হয়ে আতেল হলে তুমি এই যুগে টিকতে পারবে না ও সবাই তোমাকে অবহেলার পাত্র বানাবে। স্মার্টনেস সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা আছে। তাই স্মার্টনেস বিষয়টাই এখন প্রথমে ব্যাখ্যা করি।
Smartness হলো Smart শব্দটির বিশেষ্যপদ। অভিধানের ভাষায় Smart শব্দটির বাংলা অর্থ— চৌকস; অর্থাৎ, একটি কাজে থাকা অবস্থাতেও চারদিকের সবকিছু সম্পর্কে যে সজাগ থাকে এবং কোনোকিছু খুব দ্রুত ধরে ফেলতে পারে তাকে স্মার্ট বলে।
অনেকের ধারণা স্মার্ট মানে হ্যান্ডসাম, কিন্তু এটা ভুল ধারণা। 'হ্যান্ডসাম' এবং 'স্মার্ট' এক জিনিস না, হ্যান্ডসাম মানে শুধু দেখতে সুন্দর, আর স্মার্ট মানে চটপটে। তবে শুধু চটপটে হলেই সে স্মার্ট না, কিছু ব্যক্তি আছে যারা শুধুই চঞ্চল কিন্তু সেই চঞ্চলতার মাঝে কোনো কোয়ালিটি নেই, এরূপ হলে তাকে স্মার্ট বলা যায় না; স্মার্ট বলা হয় কোয়ালিটিসম্পন্ন পারফেক্ট চঞ্চলতাকে; কিছু লোক আছে যারা শুধুই দ্রুত কিছু করতে ধরে ও তাড়াহুড়া করে বিভিন্ন জিনিস নষ্ট করে, এটা স্মার্টনেস নয় এটা অস্থিরতা। আবার যে শুধু দেখতে সুন্দর কিন্তু কোনো কাজ পারে না তাকে স্মার্ট নয় বরং সহজ বাংলা ভাষায় তাকে বলা হয় 'সুন্দর গাধা'।
আবার অনেকের ধারণা স্মার্ট মানে আভিজাত্যময়; পড়নের ও ব্যবহার্য সব জিনিস দামী দামী; ব্রান্ডের শার্ট, ব্রান্ডের প্যান্ট, ব্রান্ডের বেল্ট, ব্রান্ডের জুতা, ব্রান্ডের হাতঘড়ি, ব্রান্ডের সানগ্লাস, ব্রান্ডের মানিব্যাগ, ব্রান্ডের কলম, অ্যাপাসি বাইক ইত্যাদি। কিন্তু এটা স্মার্টনেস নয়, এটা আভিজাত্য। সময়ের কাজ সময়ে যে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারে তাকে স্মার্ট বলে। আর যে স্মার্ট সে সবসময়ই সচেতন ও যত্নশীল। এ দুটি গুণ না থাকলে স্মার্ট হওয়া যায় না; কোথাও বসার আগে অবশ্যই দেখতে হবে কার উপরে বসছি, কারো রুমে ঢুকেই ধপাস করে তার বেডের উপরে বসা যাবে না, বসার আগে দেখতে হবে বেডের উপরে তার ব্যবহৃত কোনো ছোট যন্ত্রপাতি আছে কি না, না দেখেই বসলে তা ভেঙ্গে যেতে পারে; রাস্তায় পথ চলার সময় মনোযোগ দিয়ে পথ চলতে হবে, এটাই সেই সময়ের স্মার্টনেস, পথ চলছো রাস্তার মোড়ে আর মন ঘুরে বেড়াচ্ছে মঙ্গল গ্রহে, হঠাৎ এক্সিডেন্ট করলে কিংবা কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেলে, এটা স্মার্টনেস নয়।
আর, বস্তুর ক্ষেত্রে 'Smart' মানে হলো বস্তুটি সুন্দর, অধিকতর/ বহুমাত্রিক ব্যবহার উপযোগী ও টেকসই। যেমন- স্মার্ট কার্ড, স্মার্ট ফোন ইত্যাদি।

২. অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব থেকে বেরিয়ে এসো: তুমি অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকলে এই বিশ্বায়নের যুগে লাইফে অনেক বিড়ম্বনায় পড়বে। কারণ এতে তুমি এই সময়ের অনেক কিছুর সাথে সুইট করতে পারবে না। তাই এই সময়ের সঙ্গে সুইটেবল হতে আপডেট হও। আর আপডেট হওয়ার একটাই উপায়- বহিঃমুখী হও। অন্যদের সাথে মিশো, তাদের ধ্যানধারণা ও মতামত দেখে নিজের ধ্যানধারণা ও চিন্তাভাবনাকে উন্নত ও কৌশলী করে তোলো। তোমাকে চিন্তাভাবনায় ও কাজে অন্য দশজনের থেকে এগিয়ে থাকতে হবে।

৩. ভালো কমিউনিকেশন দক্ষতা অর্জন করো: আজকের দিনে কমিউনিকেশন দক্ষতা একটি অপরিহার্য বিষয়। মতামত আদান প্রদান করা, কাউকে কোনোকিছুতে কনভিন্স করা আবার কারও কাছ থেকে কোনোকিছু জানা ও শেখা এসব ইন্টারএকশনে পারদর্শী হতে হবে। এ বিষয়ে আয়মান সাদিকের 'কমিউনিকেশন হ্যাকস' বইটি পড়তে পারো।

৪. অন্যকে মোটিভেট করতে শিখো: তোমার অন্যকে মোটিভেট করতে শিখতে হবে। এটা এক দুই দিনে হবে না। চেষ্টা করো— ধীরে ধীরে হবে। আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে একটা বিমা কোম্পানির চাকরিতে জয়েন করেছিলাম। সেই চাকরিতে আমি কোনো সফলতা অর্জন করতে পারি নাই। তবে সেই কাজ করতে গিয়ে আমি মানুষের সাথে গুছিয়ে কথা বলতে শিখেছি ও গুছিয়ে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে শিখেছি। প্রথম প্রথম পারতাম না, ধীরে ধীরে শিখেছি। এখন দেখো তোমাকে মোটিভেট করে আমি এই বইটা তোমার কাছে বিক্রি করেছি। আমি যদি তোমাকে মোটিভেট করতে না পারতাম তাহলে ফালতু জিনিস মনে করে তুমি এটা কিনতেই না। তাই তুমিও চেষ্টা করো, পারবে।

৫. ইংরেজি ও কম্পিউটারে দক্ষতা অর্জন করো: আজকের দিনে কোথাও কাজ পেতে ইংরেজি ও কম্পিউটারে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তুমি কমিউনিকেটিভ ইংলিশ তথা স্পিকিং ও বাংলা থেকে ইংলিশ ট্রানস্লেটিং করে কথা বলা শিখবে। লাইফ একাডেমির ইংলিশ প্রোগ্রামে খুব সহজে ইংরেজি শেখানো হয়। আর কম্পিউটারের যেসব জিনিস শিখবে সেসব হলো— অফিস প্রোগ্রাম, ফটোশপ, পাওয়ার পয়েন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ভিজুয়াল বেসিক এবং ইন্টারনেট ও ওয়েব মিডিয়া এর কাজ।
এই দুইটি জিনিস ভালোমতো শিখলে তোমার কাজের অভাব হবে না। কাজ করে শেষ করতে পারবে না। বহুবিধ কাজের সেক্টর তোমার জন্য খোলা থাকবে।

৬. কিছু কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখো: সময় ও বাস্তবতা জিনিসটা বড়ই অদ্ভুত। তোমার ভালো কম্পিউটার দক্ষতা ও ইংরেজি দক্ষতা থাকলেও হয়তো দেখা যাবে নিজস্ব কম্পিউটার না থাকায় সেসব দক্ষতা কাজে লাগাতে পারছো না। সেজন্য সেসব উপকরণ কেনার জন্য প্রথমে কিছু ওডজব করা লাগতে পারে। তাই কিছু ওডজব এর প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখো যেমন— ইলেক্ট্রিক মেকানিক, পাইপলাইন মেকানিক্স, আয়রন-লন্ড্রী, কার ড্রাইভিং ইত্যাদি। নিজের একান্ত দুর্দিনে এসব খুব কাজে দেয় এবং দুর্দিন কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হয়।

৭. Personal Resource Assessment: জীবনে উন্নতি করার জন্য ও নিজের স্বপ্নকে টিকিয়ে রাখার জন্য পারসোনাল রিসোর্স খুবই প্রয়োজন। প্রবাদে আছে— 'গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন'। এমনকি সেটা নিজের বাপের ধনসম্পদ হলেও সেটা কোনো কাজে আসে না। তাই অল্প বয়স থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট শুরু করে দাও। আর পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট কারা করবে ও কীভাবে করবে এ বিষয়ে এর পরের পাঠে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

৮. ভেবেচিন্তে সুক্ষ ও বাস্তববাদী পরিকল্পনা করতে শিখো: ভুল পরিকল্পনা ও বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যহীন পরিকল্পনা করা হলো লাইফের বড় ভুলোগুলোর একটি। তাই কোনোকিছুর পরিকল্পনা করলে তা বাস্তবিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনা করো। এ বিষয়ে 'পরিকল্পনা' অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

৯. উপস্থিত বুদ্ধি চর্চা করো: যেহেতু তুমি সংকট জোনে আছো ও এটা থেকে তোমাকে ওভারকাম করতে হবে তাই তোমাকে উপস্থিত বুদ্ধির অধিকারী হতে হবে। কারণ উপস্থিত বুদ্ধির অধিকারী না হতে পারলে হঠাৎ কোনো এক জায়গায় কোনো এক পরিস্থিতিতে তুমি আনস্মার্ট প্রমাণিত হবে ও তোমার ভ্যালু কমে যাবে। তাই সেরুপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে এবং বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে সহজে বাঁচার কৌশল রপ্ত রাখতে উপস্থিত বুদ্ধির চর্চা করো।

১০. ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলতে শিখো: এটি কমিউনিকেশন দক্ষতার একটি অংশ। যে কথা ডাইরেক্ট বলা যায় না, ডাইরেক্ট বললে তা অভদ্রতা হয়ে যায়; কিন্তু কথাটা বলা খুবই প্রয়োজন সেই কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে হয়। বিষয়টা ব্যাখ্যা করার জন্য একটা ঘটনা বলি। ডিপার্টমেন্টে আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন আমাদের এক বান্ধবীর বাবা মারা গেলো। বাবা মারা যাওয়ার সে খুব মুষড়ে পড়লো এবং আমাকে ফেসবুকে জানালো যে সে পড়াশুনা করতেই পারছে না; কী পরীক্ষা দিবে এই নিয়ে সে খুব উদ্বিগ্ন। আমি তাকে সাহস দেওয়ার জন্য বললাম, "আমাদের টিচাররা এমনিতেই খাতা অনেক লিবারেলি কাটেন, আর কেউ পরীক্ষাকালীন দূর্ঘটনায় পড়লে তার খাতা আরও বেশি লিবারেলি দেখেন"। সে বললো, "সেটা তো আমিও জানি, কিন্তু পরীক্ষা হয় কখন আর খাতা কাটে কখন, সেই সময়ে কি আর আমার দূর্ঘটনার কথা উনাদের মনে থাকবে, আর খাতায় তো নাম থাকে না শুধু আইডি নম্বর লেখা থাকে"। আমি বললাম, "তা ঠিক, তবে টিচাররা চাইলে একটা চিরকুটে তোমার বিষয়টা লিখে তা তোমার খাতায় ভিতরে রিমাইন্ডার হিসেবে রাখতে পারেন, উনাদের বলে দেখবো"।
আমি মূলত তাকে একথা বলেছি ওকে একটু সাহস দেওয়ার জন্য যাতে ওর মনটা একটু হালকা হয়। কিন্তু আমি তো আর এই কথা টিচারকে সরাসরি বলতে পারি না; সেটা টিচারকে আদেশ করা হয়ে যায় আর তা অভদ্রতা হয়ে যায়। তাই আমি আমার প্রিয় টিচার চেয়ারম্যান স্যারকে ফোন দিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা শুরু করলাম। আমার নাম্বার সেভ করা ছিল বলে সালাম নেওয়ার পর তিনি বললেন, "হ্যা, অমুক বলো, কী খবর তোমার?" আমি বললাম, "স্যার, একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম, আবার বলা ঠিক হবে কি না সেটা ভেবে বলবো কি না তাও ভাবতেছি"। তিনি বললেন, "আরে কী এমন কথা, বলো বলো"। আমি বললাম, "স্যার, আমাদের ব্যাচের অমুকের তো বাবা মারা গেছে; ও মানসিকভাবে দূর্বল তাই ও পড়াশুনা করতে পারছে না, আর তাই কীভাবে পরীক্ষা দিবে তা নিয়ে আরও বেশি উদ্বিগ্ন"। স্যার বললেন, "হ্যা, সেরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক"। তখন আমি বললাম, "স্যার, আমি ওকে বলেছি, 'আমাদের টিচাররা এমনিতেই খাতা অনেক লিবারেলি কাটেন, আর কেউ পরীক্ষাকালীন দূর্ঘটনায় পড়লে তার খাতা আরও বেশি লিবারেলি দেখেন'। তখন ও বললো, 'সেটা তো আমিও জানি, কিন্তু পরীক্ষা হয় কখন আর খাতা কাটে কখন, সেই সময়ে কি আর আমার দূর্ঘটনার কথা উনাদের মনে থাকবে, আর খাতায় তো নাম থাকে না শুধু আইডি নম্বর লেখা থাকে'। তখন আমি ওকে সাহস দেওয়ার জন্য বলেছি, 'টিচাররা চাইলে একটা চিরকুটে তোমার বিষয়টা লিখে তা তোমার খাতায় ভিতরে রিমাইন্ডার হিসেবে রাখতে পারেন, উনাদের বলে দেখবো'। স্যার, আমি ওকে এটা বলেছি শুধু ওকে সাহস দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে বলবো সেজন্য নয়। আমি আপনাদের কাছে যেটা বলবো সেটা হলো টিচারদের পক্ষ থেকে কেউ যদি ফোন করে ওকে একটু সাহস দিতেন সেটা অনেক ভালো হতো"।
স্যার বললেন, "ও হ্যা, ঠিক বলছো, আমাকে ওর ফোন নাম্বারটা এসএমএস করে দাও তো"। আমি মনে মনে ভাবলাম এটাই তো আমি চাচ্ছিলাম। যাহোক, আমি স্যারকে ওর নাম, ব্যাচ ও ফোন নাম্বার লিখে মেসেজ দিলাম।
*এই বই যাদের জন্য লিখেছি তাদের বাইরে বেশি পণ্ডিত যারা পড়ছেন তারা এই 'চিরকুট রিমাইন্ডার' তত্ত্বটা নিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু করবেন না; এটা যে অনৈতিক আবেদন তা আমিও জানি। এটা বলা হয়েছে শুধু একটি ভালো সম্পর্ক রাখা ও কথাটি ইনিয়ে বিনিয়ে বলার কৌশল হিসেবে।
যাহোক, তুমি কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তান হয়ে থাকলে লাইফে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলার প্রয়োজন হতে পারে। তাই শিল্পটির অনুশীলন করো।

১১. স্বার্থপর হতে শিখো: স্বার্থপর হওয়া বলতে আমি অন্যের ক্ষতি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করার কথা বলছি না; এটা দ্বারা আমি কী বলতে চাচ্ছি তা অনুধাবন করার চেষ্টা করো।
প্রত্যেকের জীবনেই একটা সংকটময় সময় আসা ভালো, কারণ এতে করে কাছের মানুষগুলোর মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা আসল রূপটা দেখা যায় ও জীবনের বিষয়ে টেকসই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
তারাই ভাগ্যবান যাদের জীবনে এই সংকটকালটা উপযুক্ত সময়ে আসে। আর দেখা যায় শৈশবে দুষ্টু থাকা ছেলেগুলো ভাগ্যবান হয়; কারণ তারা অল্প বয়সে ভুল করে ও এর দ্বারা বুঝে যায় তার ফ্যামিলি তার প্রতি ডেডিকেটেড নাকি কনজারভেটিভ এবং সেই মাফিক লাইফ সাজিয়ে নিতে পারে।
হতভাগা হলো ভদ্র ছেলেগুলো; কারণ তাদের লাইফে এই সংকটকালটা এমন এক সময়ে আসে যখন আর নতুন করে লাইফ সাজিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় সুযোগ খুব একটা থাকে না।
একটা রূঢ় সত্য হলো জগতের প্রতিটি মানুষেরই একটি অসাধারণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকে। আর এই শক্তির নাম হলো স্বার্থ; এটা শুনতে যতো অভদ্র কথাই হোক! সত্য বড়ই নিষ্ঠুর!
তাই কখনওই নিজেকে ততটা বেশি সেক্রিফাইস করে ক্ষয় করবে না, যতটা করলে দুঃসময়ে কাছের মানুষগুলো অবহেলা করলে নিজেকে আর সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকে না।
তোমার যদি কোনো স্লো ইফেক্ট রোগ হয়ে থাকে (যেমন- প্রস্টেট সমস্যা, টিউমার ইত্যাদি) তাহলে ফ্যামিলি যত অর্থিক সংকটের অজুহাতই দেখাক না কেনো সেটার চিকিৎসার জন্য ছলে বলে কৌশলে যেভাবেই হোক ফ্যামিলি থেকে টাকা নিয়ে চিকিৎসা করাবে। তেমনি তুমি যদি কোনো সম্ভাবনাময় কাজের প্রশিক্ষণের সুযোগ পাও সেটার জন্যও একইভাবে ফ্যামিলি থেকে টাকা নিয়ে প্রশিক্ষণ নিবে। এসব বিষয়ে কোনো সেক্রিফাইজ করবে না। কারণ একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে ফ্যামিলির জন্য তুমি কী কী সেক্রিফাইজ করেছো সেসব কেউ দেখবে না, সেসবের কোনো মূল্যায়নও করা হবে না। বরং সেই বয়সে ফ্যামিলিকে তোমার কী কী দেওয়ার কথা, তার কী কী দিতে পেরেছো ও কী কী পারো নাই শুধু সেসবের মূল্যায়ন করা হবে। আর কোনোকিছু তুমি কেনো পারো নাই সেই কেনো'র উত্তর কেউ জানতে বা বুঝাতে চেষ্টা করবে না, মূল্যায়ন শুধু একটাই- তুমি পারো নাই।
আর হ্যা আরও একটা রূঢ় সত্য হলো তুমি চাইলেও পালিয়ে বাঁচতে পারবে না, কারণ মানুষ তার দায়িত্ব ভুলে গেলেও অধিকার কিন্তু ঠিকই মনে রাখে; সে তার প্রাপ্য ফেরৎ চাইবেই, তা ফেরৎ দেওয়ার মতো শারীরিক, আর্থিক ও ভাগ্যগত সামর্থ্য তোমার থাক আর নাই থাক।
তাই বাঁচতে চাইলে স্বার্থপর হওয়ার চেষ্টাও চর্চা করো। জানো তো- 'সারভাইভাল অব দ্যা ফিটেস্ট!'।

১২. পাল্টিবাজি মারতে শিখো: প্রথমেই বলে নিই এই কাজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও শুধুমাত্র শেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে; আর সেজন্য কিছু পূর্বপ্রস্তুতিও থাকতে হবে। এর অপব্যবহার করলে রাখাল ও বাঘের গল্পের মতো দশা হবে। যখন দেখবে আশেপাশের সব মানুষ তোমার সাথে পাল্টি মারছে তখন আর তুমি স্থির থেকে টিকতে পারছো না তখন টিকে থাকার তাগিদে পরিমিত মাত্রায় পাল্টি মারতে শিখো। আর এই পাল্টি মারার বিষয়টি ব্যক্তিগত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।

এসব তো করবেই এছাড়াও আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখবে; নিম্নে সেসব বিষয়ের দু'একটি তুলে ধরলাম—
প্রথমত, একই সময়ে একই কাজের দ্বারা সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করবে না, সেটা করতে গেলে সেই বাপ-ছেলের গাধা বিক্রি করতে যাওয়ার গল্পের মতো হবে। কিছু মানুষ কোনো বিষয়ে অখুশি থাকবেই, সেটা নিয়ে ভাবলে সমস্যায় পড়বে।
সেই গাধা বিক্রি করতে যাওয়ায় গল্পটা হলো→
একদিন বাপ আর ছেলে একটি ছোট গাধা বিক্রি করতে যাচ্ছিল। তারা দুজন ও গাধা সকলেই হেটে যাচ্ছিল। এটা দেখে কিছু লোক বলল, "গাধার চেয়ে এরাই তো দেখি বড় গাধা, গাধা রেখে নিজেরা হেটে যাচ্ছে"। একথা শুনে তাদের ভাবান্তর ঘটলো; তবে গাধাটি ছোটো ছিল বলে বাবা ছেলেকে গাধার পিঠে তুলে দিয়ে নিজে হেঁটে যেতে লাগলো। কিছুদূর গিয়ে একটা জায়গায় কিছু লোকের মধ্যে একজন বলে উঠলো, "ওই দেখ, তোকে না বলেছিলাম আজকাল ছেলেরা বাবাকে সম্মান করেনা, তুই তো আমার প্রতিবাদ করেছিলি; এখন চোখের সামনে তার প্রমাণ দেখ"। এটা শুনে ছেলে লজ্জা পেয়ে নামলো ও বাবা গাধার পিঠে উঠলো। কিছুদূর গিয়ে কিছু মহিলা বলে উঠলো, "বুড়ো বাপের দেখো বিবেক, ছোট ছেলেকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর নিজে চড়ে যাচ্ছে"। এতো সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে তারা এবার গাধাটা যে ছোটো সেই চিন্তা ছেড়ে দিয়ে দুজনে গাধার পিঠে চড়লো। গাধাটা ছোট হওয়ায় তা বেমানান দেখাচ্ছিল। এবার একজন লোক রেগে গিয়ে বললো, "পাষাণ্ড কাণ্ডজ্ঞানহীন তোরা, এতো ছোটো গাধার পিঠে দুজন চড়েছিস; এখন গাধাকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত; এবার তোরা গাধাকে বেধে চাঙ্গে তুলে নিয়ে দুজন দুপাশে লাঠি কাঁধে করে নিয়ে যা। একথা শুনে তারা আশেপাশের বাড়ি হতে চাঙ ও লাঠি যোগাড় করে গাধাকে পা বেঁধে চাঙ্গে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। এবার সাঁকো পার হতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পানিতে পড়ে গাধা মারা গেলো।
যাহোক এ গল্পের মূল শিক্ষা হলো, সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করো না; নিজের সুস্থ চিন্তা থেকে যেটা ভালো মনে করো সেটা করো।

দ্বিতীয়ত, সেই কয়েক অন্ধের হাতি দেখার গল্পের মতো সেসব ব্যক্তি কোনো জিনিসের ১০% জেনেই তাতে কমেন্ট করে সেসব লোকের উপর কোনেরূপ ভরসা করবে না। কারণ তাদের কোনো কোয়ালিটি নেই। তারা ক্ষণেক্ষণে রূপ বদলায়; তারা কয়েক প্রকারের কথা বলে। এরূপ লোকের আরও একটি বাজে বৈশিষ্ট্য হলো- এরা প্রায়ই এরূপ যুক্তি দেখায়- অমুকের ছেলে এই করেছে, সেই করেছে, তুমি কী করেছো? তারা এটা খতিয়ে দেখে না যে অমুক তার ছেলের সেই জায়গায় যাওয়ার জন্য কতোটা সাপোর্ট দিয়েছে আর আমি কতোটা সাপোর্ট দিয়েছি। তাই এই জাতীয় লোক তোমার খুব কাছের মানুষ হয়ে থাকলেও সে তোমার জন্য সহায়ক হবে সেই আশা একদম ছেড়ে দিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখো।

আরও কিছু বিষয় আছে যা এই বইয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে এই বয়সে তা তোমাদের কাছে হয়তো দুর্বোধ্য হবে। তাই লাইফ একাডেমির পরামর্শ ডেস্কে এসে পরামর্শ ফি দিয়ে সেসব খুব সহজে জেনে নিতে পারবে।

সুতরাং—
বাঁচতে হলে শুধু নিজের জন্যই বাঁচো
এবং মরতে হলেও শুধু নিজের জন্যই মরো
কারণ এই পৃথিবীতে সবাই সফলতার কৃতিত্বের অংশীদার হতে চায়
কিন্তু কেহই ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করতে চায় না।

Wednesday, April 28, 2021

পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট কারা করবে ও কীভাবে করবে!


পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট— কী? কেনো? এবং কীভাবে?

জীবনে উন্নতি করার জন্য ও যথাসময়ে লাইফের বিষয়সমূহ অ্যাচিভ করার জন্য Personal Resource Assessment তথা, ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জন খুবই প্রয়োজন। প্রবাদে আছে— 'গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন'। এমনকি সেটা নিজের বাপের ধনসম্পদ হলেও সেটা কোনো কাজে আসে না। তাই অল্প বয়স থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট শুরু করে দাও। আর পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট কারা করবে ও কীভাবে করবে সে বিষয়ে এই নিবন্ধে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয় কারা পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করবেন?
হ্যা, এর উত্তর হলো— যারা কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তান শুধু তারাই পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করবেন। যারা ডেডিকেটেড ফ্যামিলির সন্তান তাদের পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করার প্রয়োজন হয় না; ফ্যামিলির সম্পদ ও সাপোর্টই তাদের লাইফে সহায়ক হয়। যাহোক মূল কথায় আসি। বিসিএস আইডল 'সুশান্ত পাল' তার ফেসবুকে একদিন একটি অনুচ্ছেদ লিখেছিলেন, সেটি হলো→
৩ ধরনের লোকের সাথে সম্পর্ক রাখা কঠিন—
এক) যাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ নেই, যারা জীবনকে বিচার করে জীবনে ওরা কী পায়নি, কেবল তা দিয়ে। Gratitude is power.
দুই) যারা সারাক্ষণই তাদের নিজের জীবন এবং আশেপাশের সবকিছু নিয়ে অভিযোগ করতে থাকে। অতি প্রত্যাশা মানুষকে অসুস্থ, ক্রুদ্ধ ও অবিবেচক করে দেয়। You love someone and 'so' you overexpect from them. It really destroys their life. Better, even hate them and let them live in peace.
তিন) যারা মনে করে, একমাত্র তারাই ঠিক, বাকিরা সবাই ভুল। তারা কখনও নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করে না, কারণ তারা বিশ্বাসই করে না যে তাদের মধ্যে এমন কিছু আছে, যা শোধরানো প্রয়োজন। It's a serious mental disorder!
এমন মানুষ আপনাকে মানসিকভাবে হত্যা করতে থাকে প্রতিটি মুহূর্তেই। The tragedy is, not always you can get rid of them.

সুতরাং তোমাদের যাদের অভিবাবক এরূপ ধরণের তারা লাইফে পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করবে। আর শুধু তারাই নয়, যাদের অভিবাবক এই তিন ধরণের তারা তো লাইফে পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করবেই সেইসঙ্গে আরও কিছু ধরণের ব্যক্তিত্ব আছে যাদের অভিভাবক সেরূপ ব্যক্তিত্বের লোক তারাও লাইফে পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করবেন। সেসব হলো—

১. No Risk ও কমফোর্ট জোনে থাকা সুবিধা প্রত্যাশী: এ ধরণের ব্যক্তি এরূপ যে, তারা ভাবে নিজের সম্পদ যদি অধিক মাত্রায় ব্যয় করে সন্তানের লাইফ উন্নত করে দেই, আর সন্তান যদি বৃদ্ধ বয়সে না দেখে তথা অবহেলা করে তাহলে তো লস্। এই ঝুঁকি কেনো নিবো? অন্যদিকে আবার তাদের সন্তান লাইফে ভালো কিছু করে তাদের মুখ উজ্জ্বল করুক ও তাদের বৃদ্ধকালের সাপোর্ট হোক এই প্রত্যাশাও করে। অর্থাৎ ঝুঁকিমুক্ত কমফোর্ট জোনে থাকবে আবার সম্মান ও সুবিধাও প্রত্যাশা করবে— 'গাছ রোপণ করবে কিন্তু গাছের পরিচর্যা করবে না আবার সেই গাছ হতে যারা গাছের পরিচর্যা করে যেরূপ ফল পায় সেইরূপ ফলও আশা করবে'। এরূপ অভিভাবক যাদের রয়েছে তারা লাইফে পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করবে।

২. আদর্শহীন যুক্তিবাদী অর্থাৎ যুক্তি দেখিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া ব্যক্তি: এ ধরণের ব্যক্তি হলো 'দুষ্ট সিংহ ও মেস সাবকের গল্পে'র সিংহের চরিত্রের মতো। গল্পটা হলো— একদিন এক মেস সাবক পাহাড়ের ঝর্ণায় পানি খেতে গেলো। আর তাকে দেখে এক সিংহের খুব লোভ হলো, এবং  ভাবলো এতো সুন্দর ও তাজা মেস সাবককে খেতেই হবে। তো সিংহ যে মেস সাবকটিকে খাবে এটাতে সে নিজেকে লোভী ও নিষ্ঠুর হিসেবে প্রমাণ করতে রাজি নয়, তাই সে নিজেকে সাধু প্রমাণ করে ভেড়ার বাচ্চাটিকে খেতে একটি অজুহাত তথা খোঁড়াযুক্তি উপস্থাপন করলো; সে মেস সাবকটিকে বললো, 'এই বদমাশ, তুই জল ঘোলা করলি কেনো? আমি পশুরাজ হয়ে তোর ঘোলা করা জল পান করবো?'। মেস সাবক উত্তর দিলো, 'হুজুর আপনি তো উপরে (উজানে) আছেন আর আমি নিচে (ভাটিতে) আছি, জল আপনার কাছে থেকে নিচে নেমে আমার কাছে আসছে, আমি জল ঘোলা করলেও সেটা তো অন্যদিকে যাচ্ছে, আপনার কাছে তো যাচ্ছে না; তাহলে আমার ঘোলা করা জল পান করতে আপনার সমস্যা হচ্ছে- এটা কেমন কথা?'। তখন সিংহ বলল, "আচ্ছা, এটা কথা বাদ; একবছর আগে তুই আমার নামে কটু কথা বলে আমাকে গালাগালি করেছিলি এজন্য তোকে শাস্তি পেতে হবে"। মেস সাবক উত্তর দিলো, "হুজুর আমার বয়স ছয়মাস মাত্র, একবছর আগে আমি আপনাকে গালি দিয়েছি আবার কীভাবে?"। এবার সিংহ বলল, "ও, তাহলে তোর মা আমাকে গালি দিয়েছিল; তুই তো দেখতে তোর মায়ের মতো তাই চিনতে ভুল হচ্ছে, যাহোক তোর মায়ের জন্য তোকে শাস্তি পেতে হবে"— এই বলে সিংহ মেস সাবককে তাড়া করে ধরল ও খেয়ে ফেলল।
এ ধরণের ব্যক্তিও হলো, তারা কোনো একটি দায়িত্ব পালন করবে না, তবে এটি তাদের দায়িত্বহীনতা কিংবা ব্যর্থতা হিসেবে প্রকাশ পাক তাও তারা হতে দেবে না, তারা বরং একটা খোঁড়াযুক্তি দেখিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাবে। যেমন ধরো— তুমি একটা প্রয়োজনীয় জিনিস চেয়েছো। তখন তাদের কোনো একটা খোঁড়া যুক্তি দাঁড় হবেই। যেমন- "অমুকের সম্পদ তো আমার চেয়ে বেশি, সে কি তার সন্তানকে এই জিনিস দিয়েছে? তাহলে আমি কেনো দিবো?"
এদের মেন্টালিটি হলো- একটি যুক্তি দেখানো ও সেই যুক্তির সাথে একটি উদাহরণ জুড়ে দেওয়া ও এভাবে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া ও নিজেকে সাধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখা। তোমাদের যাদের অভিভাবক এই ধরণের তাদেরকে লাইফে পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করতেই হবে।
কারণ, চিকিৎসা বিজ্ঞানে দেখা যায় এমন কিছু কিছু রোগ আছে সেসব রোগ যার থাকে সেই রোগের সাথে সম্পর্কিত আরও কিছু রোগ তার থাকে তেমনি এ ধরণের লোক খুবই স্বার্থবাদী হয় এবং এটা সাইকোলজিক্যালি প্রমাণিত যে, এ ধরণের লোকের মতিগতি খুবই অভাবনীয়, অকল্পনীয় ও অস্বাভাবিক হয়ে থাকে। যেমন- হয়তো দেখা গেলো তুমি সারাজীবন ফ্যামিলিতে কাজ করে আশায় থাকলে আর শেষ বয়সে মৃত্যুর পূর্বে তিনি সন্তানের লাইফের কথা না ভেবে নিজের নামধাম ফুটানোর জন্য কিংবা 'সাদকায়ে জারিয়া' অর্জনের জন্য তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি কোনো এক দাতব্য সংস্থায় উইল করে দিলেন। তাই এ ধরণের লোকের উপর কোনোরূপ ভরসা করবে না। এক্ষেত্রে পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্টই তোমার একমাত্র পন্থা।

৩. মামলাবাজ: একজন নেশাখোর তিনদিন অভুক্ত থাকার পর তাকে যদি অল্প কিছু টাকা দেওয়া হয় তবে সেই টাকা দিয়ে সে প্রথমে খাবার কেনার পরিবর্তে নেশার বস্তু কিনবে কিংবা নেশার বস্তু কেনার টাকাটা আগে আলাদা করে রেখে দেবে, বাকি টাকা দিয়ে অল্প কিছু খাবার কিনবে; খাবার তার কাছে সেকেন্ড বিষয়। নেশা না ছাড়া পর্যন্ত সে স্বাভাবিক মানুষ হতে পারবে না। ঠিক একই অবস্থা মামলাবাজ মানুষদের ক্ষেত্রেও। একবার 'প্রথম আলো' পত্রিকায় পড়েছিলাম, এমনকি তাদের ছবিসহ ছাপিয়েছিল- দক্ষিণবঙ্গের কোন জেলায় যেনো দুইজন ব্যক্তি কয়েক শতক জমির একটি টিলা নিয়ে আদালতে মামলায় রত। তারা সেই কয়েকশতক জমির জন্য একযুগ ধরে মামলা চালাচ্ছেন এবং মামলা চালাতে গিয়ে নিজেদের কয়েক বিঘা জমি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন। তবুও তারা একে অন্যের কাছে হারতে নারাজ। এই ধরণের ইগোসম্পন্ন অস্বাভাবিক মেন্টালিটির মামলাবাজ অভিভাবক যার রয়েছে সে অবশ্যই লাইফে পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করবে। কারণ এরূপ অভিভাবক ফ্যামিলিতে থাকলে ফ্যামিলির উন্নতির জন্য যতো কিছুই করো না কেনো সব বিফলে যাবে।

৪. উদাসীন-দায়িত্বহীন অভিভাবক: এই পয়েন্টটি লেখার প্রয়োজন হয় না; কারণ যারা বাস্তবতা দেখে বড় হয় তারা ছোটবেলা থেকে সেভাবেই গড়ে উঠে। তারপরও এটি লিখছি শুধু বাস্তবতা দেখে বড় হওয়া ও মরীচিকা দেখে বড় হওয়া এর মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করানোর জন্য। আমার পরিচিত একজন লোক ছিলেন। উনার কোনো ছেলেসন্তান না থাকায় ও পরপর কয়েকটি মেয়েসন্তান হওয়ায় এবং আবারও বিয়ে করার পর সেখানেও মেয়েসন্তান হতে থাকায় উনি সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন। তার মেয়েসন্তানগুলোর কাছে তাদের মা'ই ছিল প্রধান অবলম্বন। কারণ তিনি তার সন্তানদের লাইফ নিয়ে ভাবতেন না। তিনি উদাসীন ছিলেন, ঘুরে বেড়াতেন ও অপরিণামদর্শী ছিলেন। মাঝে মাঝে জমি বিক্রি করে সংসারের ও নিজের ঘাটতি মেটাতেন ও নিজের নেশায় মত্ত থাকতেন। তার নেশা ছিল বিভিন্ন পুরাতন ও প্রাচীন আমলের পয়সা সংগ্রহের কাজে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো এবং তার স্বপ্ন ছিল একদিন তিনি এতো দামী পয়সা পাবেন যে তা জায়গামতো বিক্রি করে তিনি কোটিপতি হবে। তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি; তিনি বেঁচেও নেই। এই কথাগুলো উনাকে ছোট করার উদ্দেশ্যে লিখছি না, উনার আত্মার শান্তি কামনা করেই লিখছি। যাহোক, আমি এখনে যে বিষয়টা তুলে ধরতে চাই সেই আসল কথায় আসি। যেহেতু তার সন্তানরা এই বাস্তবতা দেখেই বড় হচ্ছিলেন যে, তাদের বাবা তাদের লাইফ নিয়ে ভাবেন না। তাই তারা নিজেদের পথ নিজেরা তৈরি করতে কাজ করা শুরু করেন। দুইবোন গার্মেন্টসে কাজ করতেন তাদের একজন সেই চাকরির মাঝেই এসে কারিগরি বোর্ড হতে এইচএসসি পরীক্ষা দেন ও পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঞ্চ পেয়ে টিউশনি করে পড়াশুনা চালান। এখন বিয়ে হয়েছে। বরসহ দুজনেরই টিউশনি করে চলেন ও সরকারি চাকরির চেষ্টা করছেন, বিভিন্ন চাকরি হয়েছিল কিন্তু করেন নাই, সরকারি চাকরির জন্য নিজেদের সর্বোচ্চ ইফোর্ট দিচ্ছেন। আরেক বোন জাতীয়তে পড়তেন ও চাকরি করে বেশ টাকা জমিয়েছেন, এখন সেই টাকা বিনিয়োগ করেছেন একটি সহজ ব্যবসায় আর সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের বড় দুইবোন প্রথমে বিভিন্ন প্রজেক্টে ও কোম্পানিতে চাকরি করতেন, তাদের একজন এখন ব্যাংকের ক্যাশে সহকারী হিসেবে থাকেন ও তার স্বামী ভালো চাকরি করেন। সবার ছোট বোন পড়াশুনা করেন। অগ্রজদের তৈরি করা পথ ও সহযোগিতা তার জন্য সহায়ক হয়েছে। যাহোক এতক্ষণে অবশ্যই অনুধাবন করতে পেরেছো যে, যারা বাস্তবতা দেখে বড় হয় তাদের সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় তাদের যারা মরীচিকা দেখে বড় হয়। কারণ একটা কথা আছে "গাছে তুলে দিয়ে মই টান দেওয়া" এটা তাদের সাথে ঘটে থাকে। তারা ভুল বিশ্বাস নিয়ে জীবন চালায় এবং ভুলটা এমন এক সময়ে এসে ধরা পড়ে ততদিনে তার অনেককিছু হারানো হয়ে যায়। আবার শুরু থেকে শুরু করতে হয়। লাইফের কাজগুলো পিছিয়ে যায়।

৫. ধোঁকাবাজ ধূর্ত অভিভাবক যার আছে : এমন কিছু অভিভাবক থাকেন যারা আসলে তার সন্তানকে কোনো একটা জিনিস দিবেন না, কিন্তু সেই বিষয়টা আবার ডাইরেক্ট বলবেও না যে তারা সেটা দিবে না; বরং সেটা দেওয়ার নাম করে তা না দেওয়ার নাটক তৈরি করবে। এই পদ্ধতিটা এরূপ, সন্তান কোনো একটা বড় জিনিস চেয়েছে সেটা সে মেনে নেওয়ার অভিনয় করে সেটা দেওয়ার কথা বলে একটা লোকদেখানো আয়োজন করবে যেমন গরু বিক্রি কিংবা গাছ বিক্রি কিংবা জমি বন্ধক ইত্যাদি এরূপ কিছুর জন্য লোক ডাকাডাকি শুরু করবে (আসলে এসব বিক্রি বা কোনোটাই করবে না, শুধু দেখানোর জন্য এসব আরকি) এবং একই সঙ্গে সেই সন্তানের সঙ্গে প্রতি মূহুর্তে অহেতুক রাগারাগি ও দুর্ব্যবহার করবে; বলতে গলে অযৌক্তিক কারণেই দুর্ব্যবহার করতে থাকবে। এতে সেই অভিভাবক টার্গেট নিয়েই মাঠে নামে যে সন্তান যাতে তার সেসব অযৌক্তিক দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে তার সাথে উল্টো দুর্ব্যবহার করে। সন্তান যে পর্যন্ত না এই কাজ করে সে পর্যন্ত সে তার দুর্ব্যবহারের মাত্রা বাড়াতে থাকে। সহ্যসীমা অতিক্রম করলে সন্তান যখন উল্টো দুর্ব্যবহার করে তখন সুযোগ পেয়ে বলে বসে, "তুই আমাকে এসব বলিস! আর তোর জন্য আমি গরু/ গাছ বিক্রি বা জমি বন্ধক ইত্যাদি এসব করছি, আমি কী ভুল করতেছি রে! যা তোকে ভুলেও এসব দিবো না, তোর মতো সন্তানের জন্য টাকা খরচ করা বড় ভুল হবে আমার"। এভাবে সে দেওয়ার নাটক করে আর দিবে না।
এরূপ অভিভাবক যার আছে তার জীবনে পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট এর কোনো বিকল্প নেই।

এছাড়াও, যারা ফ্যামিলির আনপ্রডাকটিভ সন্তান তারা লাইফে পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করবে। একটি ভাঙা হৃদয়, একটি ক্ষুধার্ত পেট ও একটি শূন্য পকেট যে শিক্ষা দেয় পৃথিবীর কোনো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান সেই শিক্ষা দিতে পারে না। পুস্তকে লেখা থাকে "আইন সবার জন্য সমান"; কিন্তু বাস্তবে আইন সবার জন্য সমান নয়, বাস্তবে সবাই আইনের সুবিধা সমান তথা ন্যায্যভাবে ভোগ করতে পারে না। তেমনি পুস্তকের শিক্ষা হলো বাবা-মা সব সন্তানের জন্য সমান, কিন্তু বাস্তবতা হলো বাবা-মা ও সব সন্তানের জন্য সমান নয়। তারাও হিসাব নিকাশ করে কাজ করেন। যে সন্তান ভাগ্যবান এবং মেধাবী অর্থাৎ প্রডাক্টিভ, কাজে সফল হন বাবা-মা তার পিছে বেশি সম্পদ ব্যয় করেন আর যে সন্তান ভাগ্যবান নন, মেধাবী নন তথা সফল নন তার পিছে ব্যয় করাটা অনর্থক মনে করেন। বিষয়টা তেলে মাথায় তেল দেওয়া— এর মতো। অথচ যে সন্তান ভাগ্যবান নয় তার দিকে একটু সহানুভূতির নজর দিয়ে তাকেও কিছুটা সাহায্য করে তার লাইফের ঘাটতিটা পুশিয়ে দেওয়া হবে এই কাল্পনিক প্রত্যাশা অনেক সন্তানই করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই কাল্পনিক বিশ্বাস পুরাই ভুল; সাহায্য তো দূরে থাক কোনো ব্যক্তির কাছে নিজের কষ্টের গল্প করতে গেলে প্রথম দুইদিন সে সেই গল্প শুনে সহানুভূতি দেখিয়ে স্বান্তনা দেবে, তৃতীয় দিন সে কষ্টের গল্প শুনতে বিরক্ত হয়ে যাবে এবং বলবে, 'দূরো, তোর এতো কিছু হয় কেনো হে? চুপ কর এসব আর শুনতে ইচ্ছে করছে না'।
তাই তুমি আনপ্রডাকটিভ সন্তান হয়ে থাকলে ছোটোবেলা থেকেই পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট শুরু করা উচিৎ, কারণ হাতে কিছু সম্পদ থাকলে কিছু করার সুযোগ থাকে। শূন্য থেকে কোনো কিছুই হয় না, দই তৈরি করতে গেলেও কিছু পুরাতন দই লাগে। তাই এরূপ হতভাগা সন্তানরা এখন থেকেই পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট শুরু করে দাও।


এখন বলতে হয় পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট কীভাবে করবে সেই  বিষয়ে। পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট কতভাবে করা যায়?
হ্যা, পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট দুইভাবে করা যায়, যথা— এক) ডাইরেক্ট আয় হয় এরূপ কাজ এবং দুই) নিজের দক্ষতা উন্নয়ন যা কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করা যায়।

১) ডাইরেক্ট আয় হয় এরূপ কাজ: এরূপ কাজের শুরুটা হয় গিফট থেকে। তোমার যদি দাদা-দাদি, নানা-নানী থাকে এবং তারা কিপটে না হয়ে থাকে আর অংশীদারীত্বের সমস্যাটা সহজ হয় তবে উনাদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে দুই আড়াই শতক জমি গিফট হিসেবে লিখে নিতে পারো, সেখানে একটা ভালো কাঠের গাছ লাগিয়ে দাও যেনো তোমার ২৪-২৭ বছর বয়সে সেটা ২০/২৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারো। কিংবা তাদেরকে বুঝিয়েও জমি নেয়া ছাড়াও সেটা করতে পরো; এতে লস নাই তো। গাছে তো খাবার দিতে হয় না; সেটা তুমি নিজে বিক্রি করে টাকা নিতে না পারলেও লস নাই, আর পেলে সেটা গিফট।
এছাড়াও অল্প বয়সে ছোটো আকারে পশুপাখি পালন শুরু করতে পারো। একইভাবে দাদ-দাদী/ নানা-নানী'দের কাছে থেকে ছাগল বা বাছুর গরু নিতে পরো। পাখি পালন আরও সহজ, অল্প ব্যয়ে শুরু করা যায়। তবে পাখি পালন বিষয়ে একটি কথা রিমার্ক করে বলতে হয় তা হলো- কেউ যদি কবুতর পালন করতে চাও তাহলে প্রথমে ছোট আকারে শুরু করবে ও কমদামী জাতের কবুতর দিয়ে শুরু করবে। আর সর্বোচ্চ যত্ন পরিচর্যা করার পরেও যদি প্রথমবারেই কবুতর না টিকে তথা একে একে সবগুলো মরে যায় তাহলে আর দ্বিতীয়বার এই পাখি পালনের চেষ্টা করো না। কারণ কবুতর পালন জিনিসটা সবার হয় না, সবার ভাগ্য কবুতর পালন জিনিসটা সুইট করে না— এই কথাটা শুনে হয়তো কুসংস্কার মনে হতে পারে, কিন্তু ঘটনা সত্য। আমি দুইবার কবুতর পালনের চেষ্টা করেও পারি নাই। সর্বোচ্চ যত্ন, সচেতনতা ও পরিচর্যা করেও কবুতর টিকে নাই।

২) নিজের দক্ষতা উন্নয়ন: একটা প্রবাদ আছে 'কর্মদক্ষতাই গরীবের সর্বাপেক্ষা বড় বন্ধু'; বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করে থাকলে তা কাজে লাগিয়ে তুমি প্রয়োজনের সময় যেমন অর্থ উপার্জন করতে পারবে তেমনি তা করে আয় করে পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট হিসেবে অর্থ সঞ্চয়ও করতে পারবে। এরূপ কিছু দক্ষতা হলো—
ক. পড়ানোর দক্ষতা: এই কাজে দক্ষ হতে হলে তোমাকে ভালো ছাত্র হতে হবে ও কোনোকিছু অন্যকে বুঝানোর দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাহলে তুমি তোমার নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারবে।
খ. কম্পিউটার দক্ষতা: কম্পিউটারের কাজে দক্ষ হলে তুমি বিভিন্ন কম্পিউটার ভিত্তিক কাজ পাবে। পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট এর জন্য কম্পিউটারের কোন কোন কাজ শিখবে তা পূর্বের অধ্যায়ে বলেছি।
গ. মার্কেটিং দক্ষতা: তুমি যদি পরিশ্রমী ও স্মার্ট হতে পারো তাহলে বিভিন্ন প্রজেক্ট ও ইভেন্টের মার্কেটিং করে অর্থ উপার্জন ও সঞ্চয় করতে পারবে।
ঘ. কমিউনিকেশন দক্ষতা: এটি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে দামী একটি দক্ষতা। দুঃসময়ে প্রস্তুতির জন্য পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট এর জন্য হোক আর লাইফে বড় কিছু করতে চাইলেই হোক, তোমাকে কমিউনিকেশন দক্ষতা অর্জন করতেই হবে। আর এই কাজে দক্ষ হলে তুমি নিজেই কাজ খুঁজে পাবে বা নিজেই উদ্যোক্তা হবে, আমাকে আর কিছুই বলতে হবে না।
তবে এসব দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি কিছু সময় বিভিন্ন ওডজব করে টাকা জমাতে হবে। কারণ প্রায় প্রত্যেকের লাইফেই একটি ক্লাইম্যাক্স সংকট সময় থাকে, আর সংকটের দিনে নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করতে গেলেও কিছু টাকা লাগবে। কোথাও গিয়ে তো সেখানে সেসব কাজ করতে হবে; এতে প্রাথমিক থাকা খাওয়ার জন্য কিছু টাকা লাগবে যেটা ওডজব করে সঞ্চয় করে রাখতে হবে।

এছাড়াও, তুমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে থাকলে পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরি করে পারসোনাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করতে পারো। এটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভালো সুযোগ।

* অ্যাসেসমেন্ট (Assessment) অর্থ মূল্যায়ন; কিন্তু আমি এখানে অ্যাসেসমেন্ট শব্দটি 'অর্জন' অর্থে কেনো ব্যবহার করেছি তার পেছনে ব্যাখ্যা আছে। Achievement অর্থ বড় কোনো অর্জন, যেমন- গোল্ড মেডেল পাওয়া, পুরস্কার পাওয়া ইত্যাদি। অন্যদিকে দুঃসময়ের জন্য সঞ্চয় এটাও অর্জন তবে এই জিনিসটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্টিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্ট এর মতো; কন্টিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্ট এর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিতে এর অর্থ মূল্যায়ন আর শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত দিক থেকে এটি তার অর্জন বা সঞ্চয়। তাই এই নিবন্ধে অর্জন অর্থে আমি অ্যাসেসমেন্ট শব্দটি ব্যবহার করেছি।

Tuesday, April 27, 2021

দুঃসময়ে কাজে লাগার মতো কিছু ট্রিকস


দুঃসময় হলো মানুষের জীবনে বাস্তবতাবোধ অর্জনের সময়। এই সময়ে আশেপাশের মানুষের আসল রূপ চেনা যায় এবং এই অসহায়ত্বকে পুঁজি করে নিজের হীনস্বার্থ হাসিল করা মানুষগুলোকেও চেনা যায়। তবে এ বিষয়ে কিছু পূর্ব পরামর্শ নিয়ে থাকলে দুঃসময় পাড়ি দেওয়া সহজ হয়। বুদ্ধিমান মানুষেরা অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের জীবনে সেসব ভুল করা থেকে বিরত থাকেন। তাই তোমার পরিচিত বিভিন্ন মানুষ দুঃসময়ে যেসব ভুল করেছিলেন বলে বেশি দুর্গতি ভোগ করেছিলেন সেসব তাদের কাছ থেকে জেনে নাও। তাহলে কিছু ট্রিকস্ পাবে। দুঃসময়ে কাজে দেয় এরূপ বেশকিছু ট্রিকস রয়েছে। নিম্নে সেরূপ কয়েকটি ট্রিকস্ এর বর্ণনা দিলাম।

১. কথার পোলারিশ দিতে শিখো—
বিষয়টা ব্যাখ্যা করার জন্য প্রথমে একটা গল্প বলি। আমি প্রাইভেট স্কুলে ক্লাস নিতাম। আমি প্রতিদিনই সাদা শার্ট পড়ে ক্লাসে যেতাম। এটা দেখে ছাত্রছাত্রীরা আমাকে প্রশ্ন করতো— স্যার, আপনি সাদা শার্ট ছাড়া অন্য কোনো কালারের শার্ট পড়েন না কেনো?
তখন আমি বলতাম, সাদা হলো সেবার প্রতীক- সেজন্য ডাক্তারদের পোশাক সাদা, সাদা হলো নিরহংকার ও সাম্যের প্রতীক সেজন্য- হাজিদের পোশাক সাদা, সকল ধর্মের ধর্মগুরুদের পোশাক সাদা এমনকি সকল ধর্মের মানুষ মারা গেলে তাদেরকে সমাহিত করা হয় সাদা পোশাক পড়িয়ে। সাদা হলো সততার প্রতীক, সেজন্য প্রবাদে আছে 'সাদা মনের মানুষ'। লাইফের শুরুতে পাওয়া প্রথম গিফট দুধের রঙও সাদা। সাদা একটি আদর্শের নাম, একটি ভালোবাসার নাম। তাই আমি সাদা শার্ট পড়ি। অন্যদিকে সেই স্কুলের প্রধান যখন আমাকে বলে— তুমি তো সাদা ছাড়া আর কোনো স্ট্যান্ডার্ড পোশাক পড়ো না, এরকম অভ্যাস নিয়ে তো তুমি কোথাও নিজেকে স্মার্ট হিসেবে তুলে ধরতে পারবে না, কোথাও মূল্যায়নও পাবে না।
তখন আমি বলতাম, 'স্যার, সাদা ছাড়া আর কোনো কালার আমার পছন্দ হয় না, সাদা আমার খুব প্রিয়'। কিন্তু আসল ঘটনা হলো সাদা শার্ট অল্প টাকায় কেনা যায়। পুরান মার্কেট থেকে ওষুধ তৈরির ল্যাবরেটরির ফার্মাসিস্টদের ব্যবহৃত খুব ভালো মানের সাদা শার্ট খুব অল্প দামে পাওয়া যায়।
তাই তোমার দুর্বলতা ঢাকার জন্য আসল ঘটনা চেপে রাখতে কথার পোলারিশ দিতে শিখো। কারণ তোমার দূর্বলতা অন্যের সুযোগ গ্রহণের পথ তৈরি করবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, "তুমি দরজা বন্ধ করে কাঁদো কিন্তু কেউ ডাকলে হাসিমুখে দরজা খুলো, নয়তো তোমার এই দুর্বলতা অন্যের সুযোগ গ্রহণের পথ তৈরি করবে"।

২. সহানুভূতি অর্জন করতে শিখো—
লাইফে কোথাও কোথাও খুব অবহেলিত হয়েছো। সেই বলে সবখানেই শুধু তোমার জন্য অবহেলাই রয়েছে তা না। তুমি সৎ থাকলে কোথাও না কোথাও থেকে হেল্প পাবে। সেজন্য মানুষের সহানুভূতি অর্জন করতে শিখো। যদি কখনও হঠাৎ নিঃস্ব হয়ে যাও তখন এটা বেশ কাজে দেয়। আর এক্ষেত্রে ট্রিকস্ হলো সবার কাছে সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করতে যাবে না। নিজের ষষ্ঠ ইন্দিয় ব্যবহার করে তাদেরকে টার্গেট করো যারা তোমাকে ফেরাবে না, শুধু তাদের কাছেই যাও; সব জায়গায় নিজের Appeal খুঁজতে যাবে না। একসময় আমি তথ্যযোগাযোগ ব্যবস্থায় স্বেচ্ছসেবামূলক কিছু জনকল্যানকর কাজ করেছিলাম। তা দেখে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং সেটাকে মিডিয়া হিসেবে কাজে লাগিয়ে অর্থ আয় করার জন্য তিনি আমাকে ইনভেস্ট করার জন্য টাকা ধার দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার প্রজেক্টে কোনো পার্টনার না থাকায় আমি সেই সহায়তা নিয়ে প্রজেক্টটাতে হাত দিতে পারিনি।
করোনার কারণে বাজে সময় পার করছি। এই সময়টাতে একটা কিছু করার জন্য তার হেল্প চেয়েছিলাম। হেল্প অবশ্য পাইনি; কারণ যে সময়টাতে তিনি স্বেচ্ছায় আমাকে উৎসাহ দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন সেটা আর এখন এক সময় নয়, এর মাঝে উনার বাবাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করাতে হয়েছে এবং তিনি বাসাবাড়ির কাজসহ আরও কিছু কাজে হাত দিয়েছেন, এর উপরে আমাকে সাহায্য করার মতো অবস্থায় তিনি নেই।
আরও কিছু এরূপ মানুষের সাথে কমিউনিকেশন রাখা দরকার ছিল।

৩. দুর্ব্যবহার গায়ে মেখো না—
হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, 'দুঃসময়ে কোনো দুর্ব্যবহার গায়ে মাখতে হয় না'। এখানে গায়ে মাখা বলতে দুর্ব্যবহারের প্রতি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া করাকে বোঝানো হয়েছে, ঘটনাগুলো মনে না রাখার কথা বলা হয়নি; মনে রাখতে না চাইলেও এসব মনে থাকেই। দুঃসময় মানুষের আজীবন থাকে না, কিন্তু দুঃসময়ে দুর্ব্যবহার করা মানুষগুলোর কথা আজীবন মনে থাকে। এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো দুঃসময়ে এসব দুর্ব্যবহারের প্রতি রিঅ্যাক্ট করতে যেও না কারণ এতে তোমার অহেতুক কিছু এনার্জি লস হয়ে যাবে। এসময়ে মন ঠাণ্ডা করতে প্রয়োজনে ভবিষ্যতে সেসব লোকের উপর প্রতিশোধ নিবে বলে তাদের লিস্ট তৈরি করে রাখো কিংবা থ্রি ইডিয়ট মুভির সেই প্রিন্সিপালের ছবিতে ডার্টের তীর নিক্ষেপ এর মতো করে কিংবা অন্য কিছু করে হলেও মন ঠাণ্ডা করো শুধু তাৎক্ষণিক তাদের সাথে রিঅ্যাক্ট করে নিজের এনার্জি লস করো না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে তাদের দুর্বল সাইটগুলো অধ্যায়ন করে তাদের থেকে কিছু আদায় করার প্ল্যান করো ও তা কাজে লাগাও, শুধু রেগে যেও না এটাই হলো এক্ষেত্রে আসল ট্রিকস্।

৪. আলগা দরদে গলে যেও না—
কিছু লোক আছে যারা তোমাকে কোনো কঠিন কাজ করতে দেখলে এসে আলগা দরদ দেখাবে। এসব আলগা দরদে গলার দরকার নাই। কারণ ভালোবাসা থেকে অনেক কিছু পাওয়া যায় কিন্তু আলগা দরদ থেকে কিছুই পাওয়া যায় না। ভালোবাসা এবং আলগা দরদ দুইটা ভিন্ন জিনিস। আলগা দরদ দেখানো লোকগুলো তোমাকে দুই টাকা দিয়ে হেল্প করবে না। তারা হলো সুবিধাবাদী। তারা তোমার দুর্দিনে দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে তোমাকে কিছু হৃদয় ঠাণ্ডা করার মতো কথা বলে তারা তোমার মনে স্থান করে নিতে চায় যাতে ভবিষ্যতে তাদের অন্য কোনো কাজে তোমাকে দিয়ে দু'একটা কাজ করে নেওয়া যায়, এই হলো জগৎ। তাই যারা বাস্তব কথা বলে তাদের কথা শুনো। আলগা দরদে গলার দরকার নাই। এটা মনে রাখো যে এ জগতে সবাই সবকিছু স্বার্থের জন্যই করে থাকে। মানুষ ভালো কথা বললেও স্বার্থের কারণেই বলে থাকে। দেখবে পথেঘাটে ভিক্ষুকরা বলে থাকে "এ দুনিয়ার এক টাকা দান করিলে আখিরাতে সত্তুর টাকা পাওয়া যায়"; এই কথা বলার উদ্দেশ্য কিন্তু মানুষজনকে দানখয়রাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানানো নয়, এর উদ্দেশ্য হলো সে যাতে এই কথাটা বলে সহজে কিছু দান পায়। এটা সে নিজের প্রয়োজনেই বলেছে, হাদিস প্রচারের জন্য বলে নাই। তাই বাস্তববাদী হও; আলগা দরদ দেখানো মানুষগুলোর সুন্দর কথা শুনলেই তাতে মুগ্ধ হওয়ার দরকার নাই।

৫. ধান্দাবাজদের ঝুঝতে শিখো—
যখন তুমি হ্যাজাক লাইট লাগিয়েও তোমার কোনো কাজের জন্য পার্টনার পাও নাই এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর 'একলা চলো রে' কথাটার উপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেছো এবং তোমার কোনো কাজের সম্ভাবনাময় অগ্রগতি দেখার পর হঠাৎ তোমার কোনো বেকার বন্ধু এসে যদি বলে তোর উদ্যোগটা অনেক দারুণ রে, তুই তো পার্টনার খুঁজতেছিস, আমি তোর পার্টনার হবো কিংবা আমিও তোকে এই কাজে হেল্প করবো। তবে আমি একটা সমস্যায় আছি আমাকে একখানে যেতে হবে কিন্তু এই মূহুর্তে কাছে টাকা নাই, আমাকে দু'একহাজার টাকা ধার দে, আমি ফিরে এসে তোকে টাকাটা দিবো আর তোর সাথে কাজ করবো/ তোর কাজে হেল্প করবো। এখন তুমি যদি তোমার পকেট থেকে তাকে টাকা দাও তাহলে তোমার পকেট কিছুটা খালি হলো কিংবা যদি অন্যের কাজ থেকে ধার করে দাও তাহলে তুমি তার জন্য আরেকজনের কাজে ঋণগ্রস্ত হয়ে গেলে। কারণ সে আর তোমার কাছে ফিরেও আসবে না, তোমার সেই টাকাও ফেরৎ দিবে না। সে এসেছিলই তোমার উপরে তার ধান্দা প্রয়োগ করে তোমার দুর্দিনে তোমাকে মরার উপর খাঁড়ার ঘা দিয়ে তার নিজের হীনস্বার্থ হাসিলের জন্য। তাই শক্ত হও। এরূপ বন্ধুকে কৌশলে তোমার কাছ থেকে বিদায় করো।

৬. চকলেট থিওরির পরামর্শ গ্রহণ করো না—
যদি একই বিষয়ে একজন তোমাকে একটা সহজ পরামর্শ তথা শটকার্ট পদ্ধতি দেয় এবং আরেকজন একটা কঠিন পরামর্শ তথা সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি দেয় তাহলে তুমি আরও কয়েকজনের কাছে গিয়ে বিচার করে দেখো যে সহজ পরামর্শটি আসলেই কোনো ভালো পরামর্শ ছিলো নাকি সেটা চকলেট থিওরির পরামর্শ ছিলো। সেটি বাস্তবিকই ভালো পরামর্শ হলে তা গ্রহণ করো, আর সেটি যদি চকলেট থিওরির পরামর্শ হয়ে থাকে তাহলে সেটি বর্জন করে কঠিন পরামর্শটি গ্রহণ করো।
'চকলেট থিউরি বনাম বাস্তবতা' বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করি। কিছু কিছু শিক্ষক আছেন যারা সিলেবাসের যে টপিকগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু পড়তে ও পড়াতে মজাদার সেসব সহজ ও মজাদার টপিকগুলো বেশি বেশি করে বেশি সময় ধরে পড়ান কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কঠিন টপিকগুলো পড়ান না কিংবা পড়ালেও কোনোমতে পড়িয়ে পার করে দেন। এটাকে বলা হয় চকলেট থিওরির টিচিং। এসব টিচার খুব জনপ্রিয় হয়ে থাকেন এবং অবুঝ ছাত্রছাত্রীরাও মুগ্ধ হয়ে তাদের কাছেই আরও প্রাইভেট পড়েও থাকেন। কিন্তু এর ফলাফল ছাত্রছাত্রীরা দেরিতে বুঝতে পারেন। মানবিকের অ্যাডমিশন কোচিং করার সময় বিষয়টা আরও ভালোভাবে দেখেছি। অ্যাডমিশন কোচিংয়ে সময় খুব অল্প থাকে তাই চাইলেও সব টপিক পড়ানো যায় না; কিছু ভাইয়া আছে যারা সিলেবাসের কম গুরুত্বপূর্ণ মজাদার টপিকগুলোই শুধু মজা দিয়ে দিয়ে পড়ান অথচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কঠিন এরূপ টপিকগুলো এড়িয়ে যান কিংবা কোনোমতে পার করেন। পরামর্শের ক্ষেত্রেও এমনটিই ঘটে থাকে। চকলেট থিউরির পরামর্শ শুনে মানুষ খুব মুগ্ধ হয়। ইউটিউব জগৎ তো চকলেট থিউরির পরামর্শে পরিপূর্ণ; সেখানে বাস্তব পরামর্শ খুঁজে পেতে বেশ সময় দিতে হয়। আর শুধু ইউটিউব নয় একটি ফলপ্রসূ পরামর্শ বেছে নিতে একটু সময় যাবেই আর এটাতে অভ্যস্ত হতে হবে।

সফলতায় কমিউনিকেশনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা


মূল বিষয় উপস্থাপনার আগে ছোট্ট একটা গল্প বলে নিই। আমার দুই/ আড়াই বছরের ছোট আমার এক খালাতো বোন আছে। তো ও দেখতে বেশ সুন্দর ছিল বলে এলাকার ছেলেরা নানাভাবে ওকে বিরক্ত করতো। আর কিছু কিছু গর্ধব ছিল যারা ওকে পছন্দ করতো কিন্তু তাদের কোনো কমিউনিকেশনের জ্ঞান ছিল না এবং সেইসাথে তাদের ইনভেস্টমেন্ট জ্ঞানও ছিল না। তারা করতো কী! তারা আমার খালার ফোনে সারাদিন রিকোয়েস্ট কল দিতো। এই অল্পবয়সী নাদানেরা ভাবতো এভাবে বিরক্ত করলে মনেহয় সিনেমার গল্পের মতো একটা কিছু ঘটবে। এখন তোমরা বলো তাদের এই কমিউনিকেশন দিয়ে কি কোনো কাজ হবে? যেখানে আজকাল যোগ্যতা ছাড়া বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সাহস পাওয়া যায় না, যোগ্যতা না থাকলে কোনো মেয়েও পাত্তা দেয় না। ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া কোনো প্রেম হয় না সেখানে এই কমিউনিকেশনে কী কাজ হবে?

কমিউনিকেশন জিনিসটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় যখন ন্যায়পথে থাকার পরেও শুধু কমিউনিকেশনের অভাবে আদালতের রায় বিপক্ষে চলে গিয়ে অসৎ লোকদের পক্ষে যায় কিংবা কোনো বৈঠক মিমাংসার সিদ্ধান্ত ন্যায়ভিত্তিক না হয়ে স্বার্থবাদীদের পক্ষে হয়।
যৌতুক জিনিসটা অপরাধ হলেও এই সূচকটা দ্বারা যেমন বর্তমানে বিয়ের বাজার গবেষণা করা যায় তেমনি এসব অন্যায্য রায় হতে কমিউনিকেশন জিনিসটার শক্তি ও গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পত্তি নিয়ে একটা মামলা চলে আসছিলো প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে। আমরা জেলা আদালত পর্যন্ত রায় পেলেও হাইকোর্টের রায় পাইনি শুধু কমিউনিকেশনের অভাবে। আমাদের প্রতিপক্ষ ক্রিকেটের ম্যাচ ফিক্সিং এর মতো আদালত ফিক্সিং করে রায়টা তাদের পক্ষে নিয়েছে। অথচ সবকিছু আমাদের জন্য ফেয়ারে থাকা সত্ত্বেও আমাদের আইনজীবীকে হাত করা ও সাক্ষীদের রিয়েল সাক্ষ্যকে সরিয়ে ফেলে রচনা করা সাক্ষ্য লিখে আমাদের ন্যায্য প্রাপ্তি ব্যহত করা এসব ছিল অন্যায় আর এই ঘটনার পেছনে ছিল একটি অসৎ কমিউনিকেশন।
তুমি অসৎ উদ্দেশ্যে নয় বরং নিজের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ও টিকে থাকার জন্য তোমার কমিউনিকেশনের বৃত্ত সমৃদ্ধ করো। শুধু তত্ত্বজ্ঞান নিয়ে বসে থেকে কিছু পাবে না।
মনে করো কোনো একটা পারিবারিক বিষয় মিমাংসার জন্য গ্রামের মহৎ কিংবা তোমার আত্নীয়দের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাউকে বা কয়েকজনকে ডেকেছো। এখন তুমি কি ভাবছো এখানে একটা ন্যায় মিমাংসা হবে? মোটেও না, এখানে মিমাংসার সিদ্ধান্ত যেটা হবে সেটা হবে বিচারকের স্বার্থের উপর নির্ভর করে। তোমার সাথে যদি বিচারকের কোনো স্বার্থের বিষয় জড়িত না থাকে তাহলে তুমি যে ন্যায্যতা আশা করেছিলে তা কিছুতেই পাবে না, সিদ্ধান্তটা বিচারকেরা সেই পক্ষেই বেশি দিবেন যে পক্ষে বিচারকের লেনদেন ও স্বার্থের সম্পর্ক রয়েছে। আর এই স্বার্থের সম্পর্কটা সৃষ্টি হয়েছে কোনো একটা কমিউনিকেশনের মাধ্যমে। তোমার যদি এরূপ কমিউনিকেশন না থাকে তাহলে তুমি যতই ন্যায্যতার যুক্তি দেখাও তারা তোমার কথা কানে ঢুকাবে না। মিমাংসাকারী এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ না করে বরং স্বার্থবাদী আচরণই করবে।

কমিউনিকেশন জ্ঞান যাদের নাই তারা কোনো সমস্যা সমাধানে হাতড়ে মরে, অথচ অন্য কেউ কমিউনিকেশন দক্ষতা বলে দ্রুত সেটা সমাধান করে ফেলে। ধরে নাও ইঁদুরের গর্ত দিয়ে একটা উঁচু জমির পানি নিচু জমিতে পড়ে যাচ্ছে। এখন তুমি যদি নিচু জমিতে যেখানে পানি বের হচ্ছে সেখানে বারবার মাটি দিয়ে কুলুপ লাগাও তাহলে সারাদিনেও পানি পড়া বন্ধ করতে পারবেনা, কয়েক সেকেন্ড পরেই কুলুপ লাগানো মাটি পানির চাপে গলে পড়ে যাবে এবং আবার পানি পড়তে শুরু করবে। এই পানি পড়া বন্ধ করতে হলে তোমাকে উঁচু জমিতে যেখানে সেই গর্তে পানি ঢুকছে সেখানে মাটি দিয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিয়ে গর্তে পানি ঢোকা বন্ধ করতে হবে।
কমিউনিকেশন জ্ঞান হলো এই উঁচু জমির গর্তের মুখ বন্ধ করার মতো একটি ফলপ্রসূ জ্ঞান। সমস্যার জায়গায় সমস্যাকে নিয়ে শক্তি ব্যয় না করে সমস্যার উৎপত্তিস্থলের সাথে কমিউনিকেশন স্থাপন করে সেটি সমাধান করো।

তুমি যত বেশি মানুষের সাথে যত বেশি স্ট্রং কমিউনিকেশন গড়ে তুলতে পারবে তত বেশি তুমি পেশাগত ও পারিবারিক জীবনে বিভিন্ন বিষয়ে সফল হবে এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা তত উন্নত হবে। এক্ষেত্রে তোমার নিজের একটা পরিচয় সৃষ্টি হবে। এজন্য নিজের কাজ নিজে করে কমিউনিকেশন সৃষ্টি করতে পারদর্শী হও। ধরো তোমার পরিবার মাইক্রোবাস রিজার্ভ করবে। হাতে সময় থাকলে আরাম করে বসে থেকে অন্য কাউকে এটি করতে না দিয়ে নিজে গিয়ে কাজটি করো এবং এই কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষদের সাথে নিজের পরিচয় গড়ে তোলো।
এভাবে কমিউনিকেশনের মাধ্যমে নিজের একটা পরিচয় গড়ে তোলো। নিজের পরিচয়ই সবচেয়ে বড় পরিচয়। তাই নিজের পরিচয়ে বাঁচতে শিখো।

Friday, April 23, 2021

পরামর্শ নিবো কার কাছ থেকে?


আমরা আমাদের লাইফে বিভিন্ন বিষয়ে অন্যদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকি। আর অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আমরা সঠিক মানুষের কাছ থেকে পরামর্শ না নিয়ে ভুল লোকের পরামর্শ নিয়ে থাকি কিংবা অসম্পূর্ণ পরামর্শ নিয়ে থাকি; ফলে আমরা সেই কাজে ব্যর্থ হই। তাই এখন আমরা আলোচনা করবো আমরা পরামর্শ কার কাছ থেকে নিবো সেই বিষয়ে।

প্রথমেই আমরা ফোকাস ঠিক করে নিবো আমরা কী বিষয়ে পরামর্শ নিবো? ধরে নাও তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঞ্চ পেতে চাও এবং এক্ষেত্রে কীভাবে ভর্তি প্রস্তুতি নিতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ নিতে চাও। অর্থাৎ, তোমার পরামর্শ নেওয়ায় লক্ষ্য হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা চাঞ্চ পেয়েছে তাদের অবস্থানে যাওয়া— "আমি অমুকের জায়গাটাতে যেতে চাই"।

এখন সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ পরামর্শ পেতে তোমার করণীয় হলো, তুমি যে অনুষদে চাঞ্চ পেতে চাও সেই অনুষদে সেখানে যারা পড়ে এরূপ ৪ (চার) জনের পরামর্শ নেওয়া ও সেখানে যারা কাছাকাছি গিয়ে অল্পের জন্য চাঞ্চ পাননি তাদেরও পরামর্শ নেওয়া।

এখন হয়তো মনে হতে পারে সেখানে যারা অল্পের জন্য চান্স পাননি তাদের কাছ থেকে কী পরামর্শ নিবো?
তোমরা যদি মনোযোগ দিয়ে ফুটবল খেলা দেখে থাকো কিংবা যুদ্ধবিদ্যা সম্পর্কে অধ্যয়ন করে থাকো তাহলে দেখতে পাবে সেখানে দুইটা জিনিস আছে— অ্যাটাক ও ডিফেন্স।
তোমরা যদি সফল মানুষের কাছে পরামর্শ নাও তবে সেটা হবে অ্যাটাকের পরামর্শ; সেখানে ডিফেন্স পাবে না, কারণ তার জীবনে সেই ক্ষেত্রে কোনো ডিফেন্সের ঘাটতি ছিলনা। ফলে তার কাছ থেকে ডিফেন্স বিষয়ে পরামর্শ পাবেনা।

তোমরা ডিফেন্সের পরামর্শ পাবে যারা কাছাকাছি গিয়ে অল্পের জন্য ফসকে গেছেন বলে সফল হতে পারেননি তাদের কাছে।
তাদেরকে এভাবে প্রশ্ন করো— "ভাই, আপনি তো সফলতার অনেক কাছাকাছি গিয়েছিলেন; আপনার লাইফে কী এমন ছোট্ট ভুল ছিল কিংবা কী এমন ছোট্ট দুর্ঘটনা সেই সময়ে ঘটেছিল যে আপনি এত কাছে গিয়ে অল্পের জন্য ফসকে গেলেন?"
ব্যস, আর কিছু বলতে হবে না।
এরপর সেই বলবে, "আর বলিস না রে ভাই, আমার এই ছোট্ট ভুলের কারণে কিংবা এই ছোট্ট দুর্ঘটনার কারণে অল্পের জন্য ফসকে গিয়েছিলাম।"
এরূপ ৬ (ছয়) জনের পরামর্শ নাও। তাদের জীবনে কী কী ছোট্ট ভুল ঘটেছিল এবং কী কী ছোট্ট দুর্ঘটনা ঘটেছিল তা নোট করে রাখো। তোমার জীবনে যেনো সেসব ছোট্ট ভুল না ঘটে এবং তোমার জীবনে সেসব ছোট্ট দুর্ঘটনা এড়ানোর সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিয়ে রাখো।
এভাবে ৪ জন সফল ব্যক্তির পরামর্শ নিলে তুমি অ্যাটাক এর জ্ঞান পাবে ও ৬ জন 'অল্পের জন্য অসফল' ব্যক্তির পরামর্শ নিলে ডিফেন্স এর জ্ঞান পাবে।
এভাবে অ্যাটাক ও ডিফেন্স ঠিক করে প্রস্তুতি নিলে তুমি তোমার সেই স্বপ্নের জায়গাটাতে যেতে পারবে, ইনশাআল্লাহ্।

আর হ্যা, তোমার কাছে যদি মনে হয় এত ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া তোমার পক্ষে কঠিন কাজ তাহলে আমাদের লাইফ একাডেমির Advice Desk এর ফেসবুক পেজে গিয়ে মেসেজ ইনবক্সে তোমার কী বিষয়ে পরামর্শ লাগবে তা জানাও। আমরাই তোমার হয়ে সেই কাজ করে প্রতিবেদন তৈরি করবো ও তা অনলাইন, টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ করবো ও তোমাকেও ইনবক্সে জানাবো।

Advice Desk এর ফেসবুক পেজ:
facebook.com/advicedesk

চাকরিদাতা নামধারী প্রতারক প্রতিষ্ঠান হতে দূরে থাকো


চাকরিদাতা নামধারী বিভিন্ন প্রতারক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার ফাঁদ হতে উত্তরণের উপায়!

জীবনের প্রয়োজনে হঠাৎ করে কোনো চাকরিতে যোগদানের প্রয়োজন হতে পারে। আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তানদের ক্ষেত্রে এটা কমন একটা ব্যাপার। যাহোক, এক্ষেত্রে একটা সমস্যা হলো চাকরির বাজার সম্পর্কে যাদের কোনোই ধারণা নাই তারা বিভিন্ন ফাঁদে পা দেয় ও পরে ভুল বুঝতে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে চাকরির বাজারে শুধু তিনটি চাকরি সবসময় ওপেন আছে যেগুলো চাওয়ামাত্রই অল্প চেষ্টাতেই পাওয়া যায়; এসব হলো— গার্মেন্টসের পোশাক শ্রমিকের চাকরি, সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ এর চাকরি অর্থাৎ ভ্যানে করে কোম্পানির মালামাল নিয়ে দোকানে সেল দেওয়া এবং বিমা কোম্পানির এ্যাজেন্ট (বিমা করানোর কাজ) এর চাকরি। এর বাইরে আর কোনো চাকরি ফ্রি নেই। এর বাইরে চাকরি পেতে হলে সময় লাগবে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মানুষের এই বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে অনেক প্রতারক প্রতিষ্ঠান তাদেরকে চাকরি দেওয়ার নাম করে আর্থিক প্রতারণা করে থাকে।
তাই এখন বিভিন্ন ধরণের প্রতারক প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা হবে।

প্রথমেই বলি 'ঘরে বসে আয়'— এই বিষয়টি নিয়ে। বিক্রয় ডটকমের জব সেকশনে 'ঘরে বসে আয়' এই ধরণের অনলাইন জবের পোস্ট এপ্রুভ করা হয় না। কারণ ঘরে বসে আউটসোর্সিং করে টাকা আয় করা যায় একথা সত্য কিন্তু সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে কিছু প্রতারক প্রতিষ্ঠান প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে থাকে।
তাদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করার জন্য একটি ঘটনা বলি। ২০১৪ সালে আমি এরূপ একটি ঘরে বসে আয়ের বিজ্ঞাপন দেখে সেটাতে আবেদন করলাম; প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল 'Optimum IT Solution'। এরা খুব সুক্ষভাবে প্রতারণাটি করেছিল; এতোটাই সু্ক্ষভাবে যে আমিও নির্দিধায় তাদেরকে সত্যিকারের প্রতিষ্ঠান মনে করেছিলাম।
চাকরির বিষয়াবলী ছিল যে, দৈনিক তিন ঘণ্টা করে অনলাইনে তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে হবে; বেতন মাসে ৯০০০ টাকা। আর কী কাজ সেটা শেখার জন্য বই এবং টিউটোরিয়াল এর ডিস্ক দেওয়া হবে, সেই কাজের সফটওয়্যারের ডিস্কও পার্সেল করে পাঠানো হবে। আর সবার আগে যেটা কথা সেটা হলো এই কাজ পাওয়ার জন্য প্রথমে অনলাইনে একটি পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় টিকলে তবে কাজটি পাওয়া যাবে। যাহোক আমাকে ই-মেইলের রিপ্লাই দিয়ে বলা হলো আগামী অমুক তারিখে (২৬ তারিখ ছিল কিন্তু কোন মাস ছিল সেটা এখন আমার মনে নেই) সকাল দশটায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, পরীক্ষার দশ মিনিট আগে পরীক্ষার লিংক ই-মেইলে পাঠানো হবে। লিংক ওপেন করে পরীক্ষা দিতে হবে। আর ১০:০০ টা বাজার আগে লিংক ওপেন হবে না; শুধু ১০টা বাজলেই লিংক ওপেন হবে।
যাহোক নির্দিষ্ট দিনে সকাল ১০ টা তে অনলাইনে পরীক্ষার দিলাম। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র খুবই মানসম্মত ছিল— বাংলা, ইংরেজি, আইটি নলেজ ও গণিত থেকে প্রশ্ন ছিল। ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিলাম এবং পরীক্ষা বেশ ভালো দিয়েছিলাম। দুপুর আড়াইটায় তারা আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে ই-মেইল করলো এবং জানালো যে আমি তাদের প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য পরীক্ষায় টিকেছি। যেহেতু আমি পরীক্ষা ভালো দিয়েছিলাম তাই আমি ভেবেছিলাম সত্যিই আমি টিকেছি। কিন্তু আসল ঘটনা হলো যাতজনই পরীক্ষা দিয়েছিল সবাইকেই তারা অভিনন্দন জানিয়েছিল। এবং সেই ইমেইলেই কাজ পাওয়ার জন্য শর্ত জুড়ে দিল যে, আজ সন্ধ্যা ৬:০০ টার আগে এই ঠিকানায় এসে (মিরপুরের একটি ঠিকানা ছিল, আমার মনে হয় ওই ঠিকানায় ওদের কোনো অফিসই ছিল না) সকল সার্টিফিকেট এর ফটোকপি ও ২৫০ টাকা জমা দিয়ে কাজ শেখার বই, টিউটোরিয়াল এর ডিস্ক ও কাজের সফটওয়্যার এর ডিস্ক নিয়ে যেতে হবে। আর যারা অন্য শহরে থাকে বলে আসতে পারবে না তারা রাত ১০:০০ টার মধ্যে এই ডাচ্ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর নম্বরে (একটি নম্বর দিয়েছিল) ৩৭৫ টাকা সেন্ট করতে হবে এবং ইমেইলে সেই টাকা সেন্ট হওয়ায় Trx ID উল্লেখ করে ও কোন ঠিকানায় কাজ শেখার বই ও ডিস্ক চান সেই ঠিকানা ও ফোন নাম্বার উল্লেখ করে ইমেইল করতে হবে ও ই-মেইলে সকল সার্টিফিকেট এর স্ক্যান কপি সংযুক্ত করে দিতে হবে।
যাহোক আমি টাকা সেন্ড করলাম এবং সার্টিফিকেট এর স্ক্যান কপিসহ যথাযথভাবে ইমেইল করলাম। এবার আর ইমেইল এর রিপ্লাইও আসে না; যে নাম্বারে টাকা পাঠাইছি সেই নাম্বারও বন্ধ।
বুঝতে আর বাকি রইলো না যে প্রতারদেরকে টাকা দিয়েছি ও এতোসব কিছু নিস্ফল কাজ করেছি। আর এতোবড় সুক্ষ প্রতারণার সাথে অবশ্যই আইটি এক্সপার্টরা জড়িত। তা না হলে এতো সুন্দর ও মানসম্মত প্রশ্নে পরীক্ষা তারা নিতে পারতো না। যাহোক কথা হলো এরূপ ভুল কেউ করবে না।

সে বছরে এরূপ আরও একটি 'ঘরে বসে আয়' এর ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে আমি টাকা দিয়েছিলাম; তারা এর নাম দিয়েছিল Earn Bank। তারা তাদের মোটিভেট করার পদ্ধতি হিসেবে একটি সুন্দর ওয়েবসাইট বানিয়েছিল। তবে তারা পরীক্ষা নেয় নি। তারা ফোন করে ইন্টারভিউ নিয়েছিল। তাদের ইন্টারভিউয়ে অংশ নেওয়ার জন্য ১০০ টাকা বিকাশ করতে হয়েছিল ও তাদের ওয়েবসাইটে অনলাইনে একটি ফরম পূরণ করতে হয়েছিল ও যে নাম্বার থেকে টাকা পাঠাইছি সেই নাম্বার দিতে হয়েছিল। আর যেহেতু মাত্র ১০০ টাকা তাই যা হয় হবে ভেবে টাকা দিয়েছিলাম। দুইদিন পরে তারা ফোন করে ৬ মিনিট কথা বলে ইন্টারভিউ নিলো ও বললো পরে ফলাফল জানানো হবে। পরে আর জানায়নি; তাদেরকে ফোন করে জানতে পারলাম আমি তাদের কাজের জন্য নির্বাচিত হইনি এবং তারা আমার চেয়ে ভালো প্রার্থী যাদের পেয়েছেন তাদের নিয়োগ দিয়েছেন।
যাহোক তোমরা এরূপ কোনো প্রতিষ্ঠানের পেছনে সময় ও অর্থ ব্যয় করবে না।

এবার আসি টার্গেট দিয়ে কাজ দেওয়া জবের ফাঁদ পাতা প্রতিষ্ঠান এর বিষয়ে কথা বলতে। এরা হিসেব নিকেশ করে এমন একটা টার্গেট নির্ধারণ করে যেটা অর্জন করার কাছাকাছি যাওয়া যায় কিন্তু অল্পের জন্য অর্জন করা যায় না। এর মাধ্যমে দেখা যায় টার্গেট পূরণ না হলে তারা কোনো পার্সেনটেজ দেয় না। আর এর মাধ্যমে যে পরিমাণ বিক্রি তুমি করে দিতে পারলে সেটা তাদের লাভ। একবার এক কম্পিউটার বিক্রির প্রতিষ্ঠানের পার্টটাইম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে তাদের প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। তারা টার্গেট দিলো নিজেদের ফ্রেন্ড সার্কেল ও রিলেটিভদের মাঝে মার্কেটিং করে তাদের প্রতিষ্ঠান হতে মাসে ১৫ টি কম্পিউটার এক্সেসরিজ বিক্রি করতে হবে। সেজন্য আমার একটি নিবন্ধন নাম্বার থাকবে। আর যেসব কম্পিউটার এক্সেসরিজ বিক্রি করা হবে তার মধ্যে ৫ টি একদম কমদামী ও ৫ টি মোটামুটি দামী হওয়া যাবে এবং কমপক্ষে ৫ টি অবশ্যই বেশিদামী হতে হবে যথা সিপিইউ, মনিটর, ল্যাপটপ এই জাতীয়। বুঝতেই পারছো কত বড় টার্গেট। যাহোক তারা চাকরিপ্রার্থীদের এমনভাবে মোটিভেট করে যে এই টার্গেট পূরণ করা কোনো ব্যাপারই নয়, কজে হাত দিলেই হয়ে যাবে। আর ইন্টারভিউ গ্রহণকারীরা এমনভাবে মোটিভেশন দেয় মনেহয় এখনই এই কাজে লেগে যাই। আমাকে ইন্টারভিউ গ্রহণকরী বলেছিল, "আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন টাকার জন্য ইভেন্টের কাজ করতাম, সামিয়ানা টাঙাতাম, মঞ্চ বানাতাম ইত্যাদি ইত্যাদি; আর এটা তো তার চেয়ে অনেক স্টান্ডার্ড কাজ"। কিন্তু চিন্তা করে দেখো মঞ্চ বানানো একটি প্যাকেজ কাজ, কষ্টের কাজ হলেও সেটা করা যায় কিন্তু অন্যকে রাজি করে এভাবে প্রোডাক্ট বিক্রির টার্গেট পূরণ করা ওতো সহজ নয়। এটা পুরাই একটা ব্যবসায়ী ফাঁদ।

এবার কিছু বলতে হয় টার্গেট পূরণের ইভেন্ট জব বিষয়ে। তার আগে একটা কথা বলে নেই। বাংলাদেশে যত বড় বড় নামীদামী প্রতিষ্ঠান আছে তাদের অধিকাংশেরই ভেতরে কিছু নোংরা গল্প লুকিয়ে থাকে। এমনকি এফএম মেথড এর মতো প্রতিষ্ঠানও যে ফাঁও কাজ করে নেওয়ার জন্য টোপ ফেলে তা আমি কল্পনাও করতে পরিনি। যাহোক বছরখানেক আগে তাদের একটি ইভেন্ট প্যাকেজের কাজের বিজ্ঞাপন দেখে ইন্টারভিউ দিলাম ও কাজ করতে আগ্রহী হলাম। কাজটা ছিল- তাদের স্টুডেন্ট কালেকশনের জন্য একটি ফ্রি সেমিনার হবে। সেজন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মেসে গিয়ে প্রচারণা চালিয়ে সেই সেমিনারে ছাত্রছাত্রীদের ইনভাইট করে সেমিনারে আনতে হবে। যতজন আসবে তার উপরে একটা ইনসেন্টিভ পাওয়া যাবে তবে শুধু টার্গেট পূরণ হলেই সেই ইনসেন্টিভ পাওয়া যাবে। ৩০ জনের নিচে এলে কোনো ইনসেনটিভ পাওয়া যাবে না, শুধু দিনপ্রতি কাজের জন্য ১০০ টাকা পাওয়া যাবে। আর সেই ১০০ টাকার ৫০ টাকা আবার আগ্রীম দেয় বাকি ৫০ টাকা সেমিনারের দিনে। আর আমি যে কয়জনকে সেমিনারে আনতে পারবো তাদের মধ্যে থেকে ২০ জন ভর্তি হলে আমি ২৪০০ টাকা পাবো; এর কম ভর্তি হলে কিছু পাবো না। আর কে কে আমার মাধ্যমে এসেছিল ও ভর্তি হয়েছে তা বোঝার জন্য লগশিট মেইনটেইন করতে হবে। অর্থাৎ আমাকে একটি ছক টানা কাগজ দেওয়া হবে। সেই কাগজে আমি কার কার সাথে কথা বলেছি তার নাম, মেসের নাম এবং ফোন নাম্বার লেখা থাকবে। যাহোক আমি প্রথমদিন কাজ করে লগশিট জমা দিলাম। বিকেলে বের হয়ে ২৪ জনের সাথে কথা বলে তাদের তথ্য লিখেছিলাম। এতে শাখা পরিচালক হয়তো আমার কাজ করার এনার্জি দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে আমি টার্গেট পূরণ করেই ছাড়বো। তাই সে আমাকে বললো আজকে আমাদের সাথে মার্কেটিং করেন। এর মানে হলো কলেজ ও ভার্সিটির সামনে তাদের একটি লোক থাকবে এবং একটি টেবিল, লিফলেট ও বড় ছাতা থাকবে। এতে ওদের সুবিধা হলো সেখানে তো আর কারও সাথে বেশি কথা বলার মতো পরিবেশ থাকে না; সর্বোচ্চ বলা যার যে অমুক দিনে অমুক জায়গায় আমাদের ক্যাম্পাসে ফ্রি সেমিনার আছে, আসিয়েন। লগশিট লেখার মতো পরিবেশ সেখানে থাকে না। ফলে মার্কেটিং করলেও লগশিট না লিখতে পারলে সেটা কিন্তু আমার সফলতা হিসেবে কাউন্ট করা হবে না। যাহোক সেদিন ভার্সিটিতে আমার অন্য একটা কাজ থাকায় আমি ইচ্ছা না থাকাতেও নিজের ভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে মার্কেটিং এর কাজ করলাম এবং তার পরের দুইদিন একবেলা করে মেসে মেসে ক্যাম্পইন করলাম। হয়তো আমার টার্গেট পূরণ হতো। কিন্তু বিধির কী খেলা! সেমিনারের দিনে নিম্নচাপ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও ঝড়বৃষ্টি শুরু হলো ও আবহাওয়া অত্যাধিক ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। এমন দিনে কেউ সেমিনারে যাবে এটা কল্পনাতীত। যাহোক আমি সেজন্য সেমিনারে যাইনি। আর সেমিনার ছিল দুইদিন। যেহেতু প্রথম দিনের এই দুর্দশা তাই পরেরদিন আবহাওয়া ভালো থাকলেও আমি যাইনি। ফলে আমার টার্গেটের কি অবস্থা হয়েছে সেই খবর আর মনের দুঃখে নেই নি। আর তারা এই কাজের জন্য আমি যে আরও হিসেবের ২০০ টাকা পাই সেই টাকার একটি টাকাও দেয় নি, খোঁজও নেয়নি। শুধু মার্কেটিং এর দিনগুলোতে চারদিন ৫০ টাকা করে দিয়েছিল রিক্সা ভাড়া ও নাস্তার জন্য।
এরপর একমাস পরে আবার আমাকে ফোন দিয়েছে আবার নাকি তাদের ফ্রি সেমিনারের ও ভর্তির প্রচার ক্যাম্পইন আছে তাতে কাজ করার জন্য। বুঝো অবস্থা! কতটা নির্লজ্জ হলে কেউ এমন করতে পারে?
আমি আর যাইনি। যাবো কেনো? তাদের ভণ্ডামি তো দেখলামই। তোমরাও এরূপ কোনো টার্গেট এর কাজে যাবে না। যদি ডাইরেক্ট পারসেন্টেজ এর কাজ হয় কোনো টার্গেট না থাকে এবং নগদ টাকার কাজ হয় সেসব প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পেইনের কাজে যাবে।

আর হ্যা, এসব তো গেলো ছোটোখাটো প্রতারক প্রতিষ্ঠান এর বিষয়ে যারা ফাঁও কাজ করে নেয়। কিছু কিছু বড় মাপের প্রতারক প্রতিষ্ঠান আছে যারা চাকরি দেওয়ার নাম করে ও ট্রেনিং ফি/ জামানত এটা সেটার কথা বলে প্রতিজন লোক হতে কয়েক হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেয়। সেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারবে লাইফ একাডেমির 'স্কুল অব অ্যাওয়ারনেস' প্রজেক্টের ফ্লপ ইনভেস্টমেন্ট বিভাগে ও 'চাকরি বাজারের সতর্কতা' ফিচার থেকে।

রিসোর্স ও অ্যাবিলিটি


কারও কোনোকিছু করতে পারা বা না পারার বিষয়টি তার রিসোর্স ও অ্যাবিলিটির উপর নির্ভর করে। আর রিসোর্স ও অ্যাবিলিটি মিজারমেন্টের বিষয়টি তো তোমরা এই অল্প বয়সে করতে পারবে না। সেটা করার মতো জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তোমাদের নেই। তাই এই বিষয়ে তোমাদেরকে অভিজ্ঞ ও সিনিয়র কারো পরামর্শ নিতে হবে। তারা তোমার কনফিগারেশন পরিমাণ করে তোমাকে লাইফের পরিকল্পনা করতে সহায়তা করবে।
এক্ষেত্রে সেই কাজে তোমাকে যেই হেল্প করুক না কেনো সে যেনো তোমার PRC (Personal Real Condition) টেস্ট করে পরামর্শ দেয়। আর পারসোনাল রিয়েল কন্ডিশন যে পদ্ধতির মাধ্যমে টেস্ট করা হয় লাইফ একাডেমিতে সেটাকে বলা হয় PAPLD Game তথা, Personal Advising Program for Life Development। এই বইয়ের শেষে ব্যবহারিক অংশে PRC Test এর পদ্ধতি ও এর নিয়ামকসমূহের বিষয়ে বলা হয়েছে।

টিউশনি ও পার্টটাইম জব


একজন কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তানের উচিৎ ১৬ বছর বয়স থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করে অর্থ সঞ্চয় করা শুরু করা। এক্ষেত্রে টিউশনি একটি জনপ্রিয় পন্থা। টিউশনি কোনোভাবেই পাওয়া না গেলে পার্টটাইম জব করে অর্থ সঞ্চয় শুরু করতে হবে।
তুমি দুর্দিনে এসে টিউশনি খুঁজলে হঠাৎ করে টিউশনি পাবে না। আর টিউশনি খোঁজার বিষয়ে অনলাইনের লেখা কিংবা ইউটিউবের ভিডিওতে যেসব সুন্দর ও সুস্বাদু পরামর্শ পাবে সেসবের অধিকাংশই অকার্যকর পদ্ধতি যা শুধু তোমাকে মুগ্ধ করার জন্য বলা হয়ে থাকে, বাস্তবে সেসব পদ্ধতি ফল দেয় না। যেমন- দেয়ালে "পড়াতে চাই" এর পোস্টার লাগানো। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে এই পদ্ধতি বেশ ভালো ফল দিতো; কিন্তু এখন এটা করে তেমন একটা ফল মেলে না, এর কারণ হলো অভিভাবকরা বিশ্বস্ত সুত্রে কারো রেফারেন্স ধরে টিউটর নিতে চায় আর আজকাল আবাসিক এলাকাগুলোতে এতো বেশি পরিমাণে "পড়াতে চাই" এর কাগজ লাগানো থাকে যে সেখান থেকে তোমাকেই যে একজন অভিভাবক সিলেক্ট করবে এরূপ কোনোই নিশ্চয়তা নাই। আবার অন্যকেউ তার পোস্টার লাগানোর সময় তোমার পোস্টার ছিঁড়েও ফেলতে পারে, তুমি তো আর সেখানে পাহাড়ায় থাকবে না। আমি মাস্টার্স এ পড়ার সময় একটা ক্লাস ওয়ান এর বাচ্চার টিউশনি পেয়েছিলাম; শহরের মূল রোড হতে সেই বাড়ির গলির যে ৩০০ গজ দূরত্বের পথ সেটাতেই প্রায় ১০ জনের "পড়াতে চাই" পোস্টার ছিল। কিন্তু আমি টিউশনিটা পেয়েছিলাম রেফারেন্স ধরে।
তাই টিউশনি পেতে তোমার যে বন্ধু কিংবা বড়ভাই টিউশনি পেশায় খুব বেশি জনপ্রিয় তার কাছে বলে একটা টিউশনি জোগাড় করে নাও। এরূপ কাউকে বলার পর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তথা পরের মাসেই তুমি টিউশনি পেয়ে যেতে পারো। আর যদি না পাও তাহলে বুঝে নেবে সে আসলে তোমার জন্য কিছুই করে নাই, মুখের উপরে "পারবো না" বললে তুমি কষ্ট পাবে বলে শুধুই তোমাকে 'হবে হবে' বলে আশ্বাস দিয়েছে। এজন্য কয়েকজন বন্ধু ও কয়েকজন বড়ভাইকে বলে রাখো এবং তাদের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখো। শুধু দু'একজনের উপর ভরসা করে থাকবে না।
আরেকটা বিষয় হলো তুমি যদি এসএসসি থেকেই মানবিকে পড়া ছাত্র হয়ে থাকো তাহলে তোমার টিউশনি পাওয়ার স্পেসটা খুবই সীমিত। তুমি এক্ষেত্রে ছোট বাচ্চাদের টিউশনি পেতে পারো আর এটা খুব সীমিত একটা সুযোগ। তাই বুঝতেই পারছো এক্ষেত্রে সময় বেশি লাগবে। আর এক্ষেত্রেও অন্যদের রেফারেন্সে টিউশনি পাওয়াটাই বেশি ফলপ্রসূ কারণ আজকাল সবাই বিশ্বস্ত রেফারেন্স থেকেই টিউটর নিতে চায়। এর কারণ হলো অনেক বাসা ছিনতাইকারী কিংবা শিশু অপহরণকারী টিউটর সেজে শিশুকে পড়াতে গিয়ে গল্পচ্ছলে শিশুদের সরলতার সুযোগে শিশুদের কাছ থেকে বাসা সম্পর্কে তথ্য নিয়ে ওই বাসার নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা হ্যাক করে ফেলে কিংবা অনেক ক্ষেত্রে শিশুকেই ভুলিয়ে ভালিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে থাকে। তাই তুমি শিশুকে পাড়ানোর জন্য পোস্টার লাগিয়ে সফল হবে এই ভাবনা ছেড়ে দিয়ে রেফারেন্সে শিশুর টিউশনি পাওয়ার চেষ্টা করো এবং কয়েকজন বন্ধু ও বড়ভাইকে বলো। আর শুধু শ্যালশ্যালাভাবে বললেই হবে না, তাদের সাথে যোগাযোগ রাখো। এসব বিষয়ে সাফল্যের মূল শর্তই হলো কমিউনিকেশন এর শক্তি।
আর যদি কয়েকজকে বলেও ফল না হয় তাহলে কোনো বিশ্বস্ত ও খাঁটি টিউশন মিডিয়ায় গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে তাদের মাধ্যমে টিউশনি নিয়ে নাও। টাকা খরচ হলেও এতে কাজ হবে এটাই ভরসা। তবে আগে খোঁজখবর নিয়ে দেখো টিউশন মিডিয়াটা রিয়েল কিনা।

পার্টটাইম জব বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমেই একটা কথা বলতে হয় সেটা হলো পার্টটাইম জব বিষয়ে তরুণদের একটি কাল্পনিক ও ভুল ধারণা আছে তা হলো এসব তরুণেরা ভেবে থাকেন পার্টটাইম জব মানে ফুলটাইম জব এর অর্ধেক কাজ করা অর্থাৎ ফুলটাইম জবে অফিসে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করতে হয়, তাহলে পার্টটাইম জব মানে কোনো অফিসে ফুলটাইম এর অর্ধেক সময় অর্থাৎ চার ঘন্টা কাজ করা। এটা প্রায় পুরোটাই ভুল ধারণা। এরূপ কোনো চাকরি বাজারে নেই বললেই চলে। এরূপ চাকরি বাজারে আছে ঢাকা শহরে অল্প কিছু আর অন্যান্য শহরে তা ২-৪% হবে। পার্টটাইম জব মানে তা ফিল্ডের জব হবে এবং তাতে টার্গেট কিংবা পারসেন্টেজ ভিত্তিতে সম্মানী নির্ধারিত হবে; এটাই হলো পার্টটাইম চাকরির বাজারের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এটা তরুণেরা জানেনা বলে অহেতুক আবেদন করে সেসব অফিসে গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে তারপর বিষয়টা বুঝতে পারেন। এভাবে তারা নিজেদের সময় যেমন নষ্ট করেন তেমনি নিয়োগদাতাদের সময়ও নষ্ট করে থাকেন।
একবার রংপুর শহরে একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়ে কিছু ছেলেকে নিয়োগ দেবো বলে ভাইভা নেওয়া শুরু করলাম। এতে তরুণদের ধ্যান ধারণা দেখে বেশ অবাক হলাম। ফিল্ডে কাজ করার ইচ্ছে তাদের নাই। তারা অফিসে বসে পার্টটাইম জব আশা করে। আর যারা ফিল্ডে কাজ করতে একটু একটু চায় তারা আবার বাইসাইকেল চালাতে চায় না। তারা কাজ করার আগেই ফিল্ডে ঘোরার জন্য রিকশা রিজার্ভ করার টাকা আশা করে এবং নাস্তা খরচ ও ফিক্সড বেতন আশা করে। যখন জানানো হয় যে, বেতন কিক্সট হবে না, যেমন পারফরমেন্স করবেন তেমন আয় করবেন তখন কেউ রাজি হয় না। করবে পার্টটাইম জব আর তাতে সুযোগ সুবিধা আশা করে সরকারি চাকরির মতো, যেটা একটা অবাস্তব প্রত্যাশা।
চাকরি সম্পর্কে এসব তরুণদের কোনো ধারণাই নাই। তারা চাকরি জিনিসটাকে পাশের গ্রামের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ খেলার মতো মজাদার জিনিস মনে করে থাকেন। কিন্তু চাকরি জিনিসটা মোটেও সেরকম কোনো জিনিস নয়। চাকরি মানে একটা কাজ। চাকরি করা মানে চুক্তির কিষাণ হিসেবে কাজ করা। চাকরিজীবী মানে সে একজন কিষাণ-কামলা; পার্থক্য শুধু গ্রামে জমিতে যারা কিষাণের কাজ করে তারা অশিক্ষিত কিষাণ আর যারা কোম্পানি কিংবা প্রাইভেট জব করেন তারা শিক্ষিত কিষাণ।
তাই চাকরি জিনিসটাকে যেসব তরুণেরা চকলেটের মতো মজাদার সুস্বাদু জিনিস মনে করো তারা আজকে মাথায় এটা ঘুমিয়ে নাও ও এই ভাবনাটা ইন্সটল করে রাখো যে চাকরি জিনিসটা তোতো ঔষধের মতো একটা জিনিস; এটাতে তুমি যত দ্রুত অভ্যস্ত হতে পারবে ততই তুমি অ্যাডভান্সড হয়ে উঠবে।
সেজন্য এটা জেনে রাখো যে, তুমি যদি সেই কাল্পনিক বিশ্বাস থেকে অফিসে বসে চারঘণ্টা কাজ করার পার্টটাইম জব খুঁজতে থাকো তাহলে শুধু খুঁজতেই থাকবে, পার্টটাইম জব আর পাবে না।
পার্টটাইম জব কোথায় কোথায় পাওয়া যায় সে বিষয়ে অনলাইনে কিংবা ইউটিউবে অনেক তথ্যমূলক লেখা ও ভিডিও পাবে।
আর পার্টটাইম জবে জয়েন করার ক্ষেত্রে কী কী বিষয়ে সচেতন থাকবে তা এই অধ্যায়ের তৃতীয় পাঠে জানতে পারবে।

Thursday, April 22, 2021

পাঠ—৪ বেসলেস অ্যাসপেকটেশন সমস্যা


আজ আমি একটা অসাধারণ তত্ত্ব ব্যাখ্যা করবো আমি যেটার নাম দিয়েছি "Baseless Expectation" বা ভিত্তিহীন প্রত্যাশা। আমরা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানেরা যে সমস্যাটা মাথায় নিয়ে জন্মাই ও সারাজীবন ঘাড়ে করে বয়ে নিয়ে বেড়াই সেটা হলো এই Baseless Expectation।
আমাদের শিক্ষাজীবনে স্কুল কলেজে শিক্ষকেরা ক্লাসে আমাদেরকে শেখায় ভাত রান্না করা, আর পরীক্ষার খাতায় তারা আশা করেন বিরানী। তাদেরকে এই বিরানী দিতে গেলে বাইরে এক্সট্রা প্রাইভেট পড়ে বিরানী বানানো শিখতে হয় যেটা উচ্চবিত্তের সন্তানেরা পারে আর মধ্যবিত্তের সন্তানেরা কিছুটা পারে কিছুটা পারেনা।
পরিবারও একই কাজ করে। তারা যে পরিমাণ সাপোর্ট দিতে পারে সেটা হলো ভাত রান্না করার চাল, আর তারা ফলাফল আশা করে বিরানী। ভালো মেধা থাকলে ও সেইসঙ্গে লাক সাপোর্ট করলে সেই বিরানী দেওয়া সম্ভব হয়, নয়তো হয় না। পরিশ্রম করলেই সফলতা আসে এই সুত্র সব জায়গায় সবসময় খাটে না।
আর আজ থেকে কয়েক বছর পর তরুণ প্রজন্মের আত্নহত্যার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে এই Baseless Expectation; এর বিভিন্ন দিক এখন তুলে ধরা যাক:—
প্রথমত, আমাদের সমাজের একটা বৈশিষ্ট্য হলো আমরা বাবা-মায়েরা যেটা পরি না সেটা সন্তানের উপর চাপিয়ে দেই; সন্তানের মাধ্যমে সেই ইচ্ছা পূরণ করতে চেষ্টা করি। এখন কথা হলো স্বপ্নের জায়গাগুলো তো আর সহজ হয় না, বরং দিন দিন তা কঠিন হচ্ছে, কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে। আর যারা সেই স্থানে গিয়েছিল তারাও তো চাইবে তাদের সন্তানেরা সেই স্থানটা ধরে রাখুক। আমরা যারা সন্তানের দ্বারা স্বপ্ন পূরণে আশাবাদী তারা হয়তো সন্তানের উপর বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছি, তবে আমরা মোট বিনিয়োগ বাড়িয়েছি প্রান্তিক হারে বাড়াইনি, অর্থাৎ আমাদের বাবা মা যে বিনিয়োগ আমাদের উপর করেছিল সেই মাত্রার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছি কিন্তু সেই পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারছি না যে পরিমাণ বিনিয়োগ যারা স্বপ্ন পূরণ করে তাদের সন্তানের দ্বারা সেই স্বপ্নের স্থানটা ধরে রাখার জন্য করছে।
দ্বিতীয়ত, পারসোনাল আবেগ। অনেক সময় দেখা যায় শক্তিতে দূর্বল হওয়ায় কেউ অন্যের অনেক অত্যাচার অনাচার সহ্য করে এবং স্বপ্ন দেখে তার সন্তান লেখাপড়া করে বড় হয়ে উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে এই অন্যায়ের বদলা নেবে; কিন্তু এটা নিতান্তই পারসোনাল আবেগ। বাস্তবতার কাছে পারসোনাল আবেগের কোনো মূল্য নেই।
তৃতীয়ত, কষ্টের আবেগ। যেহেতু মধ্যবিত্ত অভিবাবকেরা কষ্টের ইনকামের টাকা সন্তানদের উপর ব্যয় করেন তাই তাদের আবেগটা একটু বেশি। কিন্তু বাস্তবতার কাছে এটাও নিতান্তই তুচ্ছ আবেগ। টাকা তো টাকাই, সেটা কষ্টের টাকা হোক আর ঘুষের টাকা হোক, বাজারে সব টাকা মূল্য একই; কষ্টের টাকায় তো আর আলাদা সিল মারা থাকে না। তাই বাস্তবতার কাছে এই আবেগও মূল্যহীন।
চতুর্থত, প্রতীক্ষার আবেগ। অনেক মধ্যবিত্ত অভিবাবকের ইচ্ছা তার ছেলে লেখাপড়া শেষ করেছে, এবার সে চাকরি করে বাড়ি করবে তারপর বিয়ে করবে। তারা ভাবে ছেলেকে এতদূর লেখাপড়া না করালে এতদিন সে মাঠে কাজ করে কিংবা গার্মেন্টসে চাকরি করে যে ইনকাম করতো ও লেখাপড়ায় ব্যয় হওয়া যে অর্থটা সেভ হতো তাতে বাড়ি করা হয়ে যেতো। তাদের প্রত্যাশাটা যৌক্তিক আছে, কিন্তু এতে একটা রূঢ় দাবিত্ব আছে। এই সময়ে সাধারণ কোনো চাকরি করে টাকা জমিয়ে বাড়ি করতে চাইলে ৬ বছর সময় লাগে। তাই দেখা যায় এই ইচ্ছা পূরণ করতে গেলে ছেলেটার কোনো প্রেমিকা থাকলে তাকে হারাতে হয়। প্রেমিকা হারানোর কষ্ট অভিবাবকেরা কোনোদিন বুঝবেন না। হয়তো সে বিয়ে করে শহরে ভাড়া বাড়িতে থাকতো ও ধীরে সুস্থে অভিবাবকের ইচ্ছা পূরণ করতো। কিন্তু পাশের বাড়ির আবুলকে ভালো বাড়ি করতে দেখে সেই ধৌর্য আর অভিবাবকের থাকে না।

মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা কী?


বলতে পারেন মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা কী?
ব্যবসায় বড় ধরণের লস হওয়া? এক্সিডেন্ট হয়ে কয়েকমাস কোমায় থাকা? ইত্যাদি ইত্যাদি?
না কোনোটাই নয়। মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা হলো— ভুল বিশ্বাস নিয়ে জীবন চালানো।
বিষয়টা পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করি— আমার দুর্দশার উদাহরণটাই হতে পারে একটি অন্যতম উদাহরণ।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন আমি কোনো অহেতুক সময় নষ্ট করতাম না। সবসময় কিছু না কিছু শিখতাম ও শেখার কাজে লেগে থাকতাম। আমি তিন বছর শুধু বিভিন্ন জিনিস শিখেই সময় কাটাই। আর আমার একটা বিশ্বাস ছিল যে, পড়াশুনা শেষ করে চাকরি না হলেও নিজেই একটা কিছু করতে পারবো।
এমন কিছু দক্ষতা অর্জনের পর আমি বাকি কিছু সময় ব্যয় করলাম সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার কাজে।
যাহোক পড়াশুনা শেষ করে নিজে কিছু করার জন্য সাপোর্ট পাওয়া দূরে থাক বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়ায় জন্য যে ঢাকায় যাতায়াত করবো সেই টাকাও ফ্যামিলি থেকে পাচ্ছিনা। আত্নীয় স্বজনদের একটা অংশ আমার জন্য বিশেষ পরামর্শ প্রকল্প খুলে বসেছে এবং তাদের প্রতিবেদনের পরামর্শ হলো কোম্পানির চাকরিতে জয়েন করো।
এর আগেই বলেছিলাম বাঙালির বৈশিষ্ট্য হলো কোনোকিছু না জেনে না বুঝেই বা ১০% জেনেই তাতে কমেন্ট করা; অনেকটা সেই কয়েক অন্ধের হাতি দেখার গল্পের মতো। আমি বংশগত সুত্রে কিছু বংশগত ও পরিস্থিতিগত রোগ উপহার পেয়েছি। যেমন- আমার মায়ের অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া ও তার কারণে অকালে গর্ভধারণের জন্য আমার চোখের সমস্যা; চশমা ছাড়া ভালো দেখিনা। সেইসঙ্গে বংশগত সুত্রে উপহার পেয়েছি এলার্জি রোগ; রোদে অল্প একটু গা ঘামলেই সারা শরীর চুলকায়। আমার দাদার কাছ থেকে উপহার পেয়েছি তার হ্যালোজিনেশন ও শর্ট টাইম মেমোরি লসিং নামক ব্রেইন এর রোগ। আমার ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাঞ্চ ফসকে গেছে এই শর্ট টাইম মেমোরি লসিং ও হ্যালোজিনেশন রোগের কারণে। এছাড়াও পেয়েছি দীর্ঘকালীন আমাশয়। আর মাতৃ তরফ থেকে উপহার পেয়েছি উচ্চমাত্রার গ্যাস্ট্রিক এবং একটি হরমোনঘটিত রোগ।
একজন মানবিকের ছাত্র হিসেবে আমার জন্য কোম্পানির চাকরিতে যেসব অল্প কিছু কাজ আছে সেসব আমার বডি ক্যাপাসিটির সঙ্গে সুইট করে না।

নিজের গল্প নিয়ে হয়তো মূল টপিক হারিয়ে যাওয়ার মতো মনে হতে পারে। যাহোক, আমার বিশ্বাস ছিল আমার ফ্যামিলি আমার পাশে থাকবে। আমার এই বিশ্বাসের জন্ম হয় কারণ আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো সামর্থ্য ও সম্পদ আমার পরিবারের আছে। কিন্তু এই ভুল বিশ্বাসই আমার জীবনে অলীতভার্সা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমার গ্রামে সালমা ও সীমা নামে দুই বোন আছে। তারা এইচএসসি থেকে গার্মেন্টসে কাজ করে টাকা জমিয়েছে, এখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। অবশ্য সালমা ফুফু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঞ্চ পাওয়ার পর চাকরি ছেড়ে টিউশনি করাতেন; এখন বরসহ দুজনেই টিউশনি করেই চলেন ও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর সীমা ফুফু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন বলে চাকরিটা রান করেছিলেন।

এখন এটা নিয়ে একটা উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে— তারা মেয়ে হয়ে পারলে আমি কেনো পারবো না?
বিষয়টা হলো, তাদের বাবা উদাসীন ছিলেন তাই জীবনে কী করতে হবে এই বিষয়টা তাদের কাছে পরিষ্কার ছিল; সেই মোতাবেক তারা করেছে।
আমার ফ্যামিলি যদি উচ্চমধ্যবিত্ত না হয়ে দরিদ্র হতো তাহলে এই ভুল বিশ্বাস আমার মাঝে জন্ম হতোনা। তখন আমি সেই মোতাবেকই সবকিছু প্রস্তুত করে নিতাম। কিন্তু এই ভুল বিশ্বাসটা সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিল।

কয়েকদিন একটা স্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে ছিলাম। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে গল্প করা অভ্যাসের কারণে ক্ষেপে গিয়ে তাদেরকে বেশকিছু এন্টিবায়োটিক দিয়েছিলাম।
তাদেরকে বলেছিলাম,——— "নিজের দুর্দিনের জন্য এখনই প্রস্তত হও। সায়েন্সের ছাত্র হলে পড়াশুনায় এক্সিলেন্ট হও। কোনো কিছুকে ফাইভ স্টার সিস্টেম দিয়ে মার্ক করা যায় যেখানে ৫ স্টার মানে এক্সিলেন্ট, ৪ স্টার মানে গুড, ৩ স্টার মানে মোটামুটি, ২ স্টার মানে নিম্নমানের আর ১ স্টার মানে খারাপ। আর এই প্রতিযোগিতার যুগে ভালো হয়েও কাজ হবে না, হতে হবে এক্সিলেন্ট। আর এক্সিলেন্ট হলে তুমি বিভিন্ন কোচিংয়ে ক্লাস নিতে পারবে যা তোমার দুর্দিনের সঙ্গী হবে।
আর মানবিক এর ছাত্র হলে সেই সুবিধা সীমিত। তবে তাদের একটা সুবিধা হলো যেহেতু পড়াশুনার চাপ কম তাই সময় করে কিছু কিছু কাজ করে টাকা জমাও ও টাকা জমিয়ে কম্পিউটার কিনে কিছু কাজ শিখে রাখতে হবে— গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি ইত্যাদি, যা তোমার দুর্দিনের সঙ্গী হবে।"

আরেকটা কথাও বলেছিলাম, "তোমরা কি ভাবছো তোমাদের বাবা-মা তোমাদেরকে এখন যেরূপ ভালোবাসে এই ভালোবাসা সবসময় একই রকম থাকবে?
মোটেও না। প্রকৃতির অন্য জিনিসের মতো এই ভালোবাসাও একসময় জীর্ণ শীর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটা তাদের দোষ নয়, এটা একটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। একজন নতুন ডাক্তার যখন তরুণ বয়সে তার প্রাকটিস শুরু করে তার তখনকার লেখা একটা প্রেসক্রিপশন ও তার ২৫-৩০ বছর পরে লেখা আরেকটা প্রেসক্রিপশন পাশাপাশি রেখে দেখলে তুমি বিশ্বাসই করতে পারবে না যে এ দুইটা একই ব্যক্তির লেখা। এটা সে ইচ্ছা করে করেনি, প্রাকৃতিক কারণেই হয়ে গেছে। মানুষ বৃদ্ধ হলে তার চামড়া ঢিলে হয়ে যায়। এটা সে প্রতিদিন একটু একটু করে টেনে চামড়া ঢিলে করেনি, এটা প্রাকৃতিক কারণেই হয়ে গেছে। ভালোবাসাও প্রাকৃতিক কারণে জীর্ণ শীর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। ভালোবাসা কোনো ধ্রুব বিষয় নয়, এটা আপেক্ষিক বিষয়।

তাই বলতে হয় জগতে ভালোবাসা বলে কোনোকিছু নেই; এখানে সবকিছুই চলে হিসেব নিকেশ করে। তোমাদের বাবা-মা এখানে তোমাদেরকে পাঠিয়েছে তাদেরও একটা হিসেব নিকেশ আছে। সেই হিসেব নিকেশের বাইরে একটা কিছু করে দেখিও তোমাকে জুতত রাখে নাকি?

জীবনের একটা সময়ে এসে তোমরা প্রেমে পড়বা এবং তখন থেকেই তোমাদের জীবনের সংকটের অধ্যায় শুরু হবে যেটা তোমার একান্ত নিজের সমস্যা।
একটি রূঢ় বাস্তবতা হলো— নিজের একান্ত দুর্দিনে কাউকেই পাশে পাওয়া যায় না। বাবা-মা, অমুক মামা, অমুক খালু, অমুক আঙ্কেল, অমুক ভাই-তমুক ভাই, অমুক বন্ধু-তমুক বন্ধু কাউকেই তখন পাশে পাওয়া যায় না। তাদের অনেকে আবার নিজে সরাসরি "না" না বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে উধাও হয়। দরকারের সময় তাদেরকে হ্যাজাক লাইট লাগিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না।
তাই নিজের কর্মদক্ষতাই দুর্দিনে টিকে থাকার একমাত্র হাতিয়ার। দুর্দিনে মানুষ নিজেই তার একমাত্র বন্ধু, একমাত্র সহযোগী। তুমি যতো ছোট কাজই করোনা কেনো সেটাই হয় একমাত্র অবলম্বন— তা তুমি কাপড় লন্ড্রি করা, চুল-দাড়ি কাটা, রাজমিস্ত্রির সহকারি হিসেবে কাজ করা, রঙমিস্ত্রির কাজ করা, পাইপলাইনের মেকানিক হওয়া যাই করোনা কেনো।"———

ছোটোবেলা থেকে বইপুস্তকে কিছু ভুয়া কথাবার্তা আজ আমাকে এই অবস্থানে এনে দিয়েছে। মাতৃস্নেহ.........। পরিবারের মতো আর........। এটা সেটা বাড়িয়ে বলা কথাগুলো আমার ভুল বিশ্বাসের ভিত্তি গড়ে তুলেছিল।
তাই পাঠ্যপুস্তকের এসব অতিরঞ্জিত কথাবার্তা সংশোধন করা প্রয়োজন। বাস্তবতার নিরপেক্ষ জ্ঞান দেওয়াই সর্বোত্তম পন্থা।

আমার অনেক দোষ থাকলেও মানুষের টাকা মেরে দেওয়া, মিথ্যা বলা, নেশা করা, স্বার্থপরতা, হিংসা, অহংকার— এসব দোষ নাই। তারপরেও আমি ইন্টারমিডিয়েটে সত্যিই এ+ পেয়েছি নাকি ভং মেরেছি তা আমার এক মামা রোল নাম্বার নিয়ে রেজাল্ট চেক করে দেখেছিল।

অনার্স শেষের সময় একবার আমার হরমোনজনিত সেই রোগটা এতটাই বেড়ে গেলো যে, চারতলায় আমার ডিপার্টমেন্টে উঠতে হলে তারমাঝে দোতলায় উঠার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হয়। কারণ পায়ের রগ কুঁচকে যায়। তখন আমি অসুস্থ মানুষটাকে মামারা পরামর্শ দিল, কোম্পানিতে চাকরি করে বেতন তুলে চিকিৎসা হতে।
মনে হয় আমি কতটা অবহেলিত তা বুঝাতে এর বেশি আর কিছু বলতে হবে না।

পরিবার, সমাজ, একটি মন্দ ভাগ্য এবং বংশগতসুত্রে উপহার পাওয়া কিছু বংশগত রোগ আমার জীবনটাকে এতটাই বিষিয়ে তুলেছে যে সায়ানাইডের বিষ এর কাছে নস্যি; কারণ সায়ানাইড একবারে মারে, আর এসব আমাকে ক্ষয়ে ক্ষয়ে মারছে।

আমার মাঝে একটা জ্যোতিষীর মতো বৈশিষ্ট্য আছে। অনেক কিছু আমি আগে থেকেই টের পেয়ে যাই। আমার যে আজ এই অবস্থা হবে তা আমি অনেক আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। তাই আমার ইন্টারমিডিয়েট এর মেসের মালিকের ছেলেকে বলেছিলাম, "আপনারা তো পাইপলাইন পরিষ্কারের কাজ করে নেন, আমাকে সেই পাইপলাইন মেকানিকদের ফোন নাম্বার দিন, আমি তাদের সাথে কাজ করবো ও কিছু টাকা সঞ্চয় করবো"। সে ছিল ফ্রিল্যান্সিং এর টিচার। সে আমাকে তার মেসের অন্যতম ভালো ছাত্র হিসেবে চিনতো। তাই সে আমাকে বললো— "এসব কাজ তুমি কেনো করবে? তুমি একটা ল্যাপটপ কিনে আমার কাছে আসিও, আমি কাজ শিখে দিবো তুমি এর চেয়েও অনেক ভালো আয় করবে। কিন্তু তখন পরিবার আমাকে সাহায্য করেনি; ব্যাংকে টাকা জমিয়ে রেখেছিল তবুও আমার জন্য ব্যয় করেনি। এই সময়ে আমি আরেকটা ফাঁদে পড়লাম। আমার মামা আমাকে তার কম্পিউটার অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করার জন্য দিলেন। যেহেতু সেটা ডেক্সটপ ছিল তাই আমি সেটা নিয়ে সেই প্রশিক্ষক এর কাছে যেতে পারলাম না। ফলে আমার কোনো শিক্ষক থাকলো না, আমি তার কাছে এবং এর ওর কাছে একটু একটু করে শুনে এসে ও বই পড়ে সেসব শিখতে লাগলাম। যেহেতু শিক্ষক নাই তাই একা একা শিখতে বেশ সময় লেগে গেল। যাহোক যখন অনেক কিছু শিখে গেলাম তখন আমার মামা কম্পিউটারটা ফেরৎ নিলেন। তাই সেটা ভেস্তে যায় আর তার পরেই কিছু লোকের মোটিভেশনে গলে গিয়ে BCS প্রিপারেশন শুরু করলাম। যার শেষে ফলাফল দাঁড়ালো এই। মানুষ কোনোকিছু না জেনেই পরামর্শ দেয়। তাই বাদবাকি জীবনে আর অন্যের পরামর্শ শুনছি না। নিজের বিশ্বাস থেকে কাজ করে যাবো।

আমি জীবনে কিছু করতে পারি আর নাই পারি এরূপ ভুল বিশ্বাস নিয়ে জীবন চালানোর বিষয়ে তরুণ প্রজন্মকে সতর্ক করে তুলতে পারলেই এটাকে সফলতা মনে করবো।

অবহেলা কী? এর প্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষণ


ভাষাবিদরা বলে ভালোবাসার বিপরীত শব্দ ঘৃণা করা, কিন্তু আমি বলি ভালোবাসার বিপরীত শব্দ অবহেলা করা।
আর অবহেলা বড় মারাত্মক প্রতিক্রিয়াশীল একটা জিনিস। অবহেলা একজন মানুষকে তার সমাজ ও পরিবার থেকে কতটা দূরে ঠেলে দিতে পারে তা একটু গভীরভাবে ধ্যান করলে বুঝতে পারবেন।
মানুষ যখন তার খুব কাছের মানুষগুলোর দ্বারা অবহেলার শিকার হয় তখন সে সারা পৃথিবী ভালোবাসা খুঁজে বেড়ায়।

অবহেলা একজন মানুষকে মানসিক বন্দি বানিয়ে দেয়। অবহেলার ফলে মানুষ স্বপ্ন দেখার শক্তি হারিয়ে ফেলে।
এই অবহেলার শিকার হয়ে আমি সারাটা জীবন এক মানসিক কারাগারে বন্দী হয়ে আছি। শুধু মাঝখানে দুই বছরের জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলাম। কারাগারের বন্দিরা তবুও বন্দি অবস্থার মুক্তি পাওয়ার পর নতুন করে সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারে। কিন্তু মানসিক বন্দীরা কোনো স্বপ্ন দেখতে পারেনা। রান্নাঘরে ধোঁয়া হলে যেমন শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তেমনি মানসিক বন্দীদের কাছে জীবনটাও শ্বাসকষ্টময় মনে হয়।

পানি পানি সর্বত্র পানি, কিন্তু পান করার মতো একফোঁটা পানিও নাই। মানসিক বন্দীদের জীবনটা হলো এমন, স্বপ্ন স্বপ্ন এত স্বপ্ন, কিন্তু বাস্তবায়ন করার মতো কোনো স্বপ্ন নেই; কারণ তার কোনো সাপোর্ট নেই, সে অবহেলার শিকার।

অবহেলিত হলে একজন মানুষের নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয়। এই অবহেলিত মানুষটা যখন বুকে কষ্ট চেপে নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন সে কেমন হবে সেটা পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। দুঃসময় মানুষের আজীবন থাকে না, কিন্তু দুঃসময়ের অবহেলাগুলোর কথা আজীবন মনে থাকে।
অবহেলার ফলে সৃষ্ট কষ্টগুলো একজন মানুষকে পরিবারবিমুখ ও সমাজবিমুখ করে দেয়।

আমার এসব বলার উদ্দেশ্য নিজের অসারতাকে তুলে ধরা নয়, এর উদ্দেশ্য মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া জুনিয়রদের সতর্ক করা। কয়েল জ্বালানোর উদ্দেশ্য মশা তাড়ানো, কয়েল জ্বালানোর উদ্দেশ্য ধোঁয়া সৃষ্টি করা নয়, কিন্তু এতে ধোঁয়া সৃষ্টি না করে যেমন মশা তাড়ানো যায়না তেমতি এসব উদাহরণ না দিয়ে বিষয়টাকে উপস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছেনা।

এখন বিষয় হলো, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা কীভাবে বুঝবে যে লাইফে সফলতা আসতে বিলম্ব হলে পরিবার একসময় অধৌর্য হয়ে সাপোর্ট দেওয়া বন্ধ করে দেবে ও সর্বোচ্চ লেভেলের অবহেলা করবে।
হ্যা, কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো কোনো পরিবারে থাকলে বুঝবে একদিন সেই পরিবার তোমাকে হেয় করবে ও তুমি অবহেলিত হবে।
তাই আমার জুনিয়রদের বলি, 'তোমরা সতর্ক হও, আমার মতো সমস্যা তোমাদের কারও আছে কিনা মিলিয়ে দেখো'—

১. ঘটনা যাই ঘটুক তা তোমার দোষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হবেঃ বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করি। কোনো কাজে কেউ সফল না হওয়ার পেছনে নিজের দোষ কিংবা অদক্ষতা ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কোনো দুর্ঘটনার কারণে কেউ কোনো কাজে ব্যর্থ হতে পারে। দুর্ভাগ্যের কারণেও কেউ কোনো কাজে ব্যর্থ হতে পারে, আবার সেই কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রবলেম এর কারণেও সে সেই কাজে ব্যর্থ হতে পারে। আবার কোনো বিশেষ কারণেও সে সেই কাজে ব্যর্থ হতে পারে।
এক্ষেত্রে ন্যারো মাইন্ডের মূল্যায়ল হলো ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান না করে দুর্ঘটনা, দুর্ভাগ্য, প্রবলেম, বিশেষ কারণ যাহাই ঘটুক না কেনো সবকিছুকেই তার দোষ হিসেবে মূল্যায়ন করা।

২. তোমার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হবেঃ ফ্যামিলি যদি সবসময় আত্মীয়স্বজনের উৎসবাদি ও ফর্মালিটি নিয়ে ভাবাছন্ন থাকে। তোমার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো নজর এড়িয়ে যায় ও উপেক্ষিত হয় তাহলে বুঝবে চূড়ান্ত পর্যায়ে যেটা হবে সেটা হলো একসময় তারা তোমাকে ও তোমার স্বপ্নকে এড়িয়ে যাবে ও জীবনে সফলতা আসতে বিলম্ব হলে তারা তোমাকে সাপোর্ট দেওয়া বন্ধ করে দেবে।

৩. অন্যখানে উদ্ভব হওয়া রাগের প্রভাব তোমার উপর এসে পড়বেঃ যদি দেখতে পাও যে পরিবারের কর্তার এরূপ একটা উদ্ভট স্বভাব আছে তা হলো মাঠে বা অফিসে কোনো বিষয় নিয়ে তার রাগ উৎপন্ন হয়েছে এবং তা সে সেখানে দেখাতে না পেরে তা সেখানে চেপে রেখে বাড়িতে এসে পরিবারের লোকজনদের সাথে অযথাই রাগারাগি করছে তাহলে বুঝে নেবে সেই ফ্যামিলিতে তোমার ভবিষ্যৎ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

৪. তোমার অবর্তমানে তোমার মূল্যবান জিনিসপত্র অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাবেঃ দীর্ঘদিন বাইরে থাকার ফলে যদি দেখতে পাও বাড়িতে তোমার মূল্যবান জিনিসপত্র অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে, তোমার রাখা বইপুস্তক ছুঁচো ইঁদুর-উঁইপোকায় খেয়ে ফেলছে; তাহলে বুঝবে একসময় যখন তোমার সৃজনশীল উদ্যোগ সফলতার খুব কাছে, আরেকটু সাপোর্ট দরকার ঠিক সেই সময়টাতে তোমার সাপোর্ট পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

৫. তোমাকে সন্তানের মতো নয়, নিজ বাড়িতে শরণার্থীর মতো জীবন যাপন করতে হবেঃ তুমি যদি নিজ বাড়িতে সন্তানের মতো বেড়ে উঠার পরিবেশ না পেয়ে শরণার্থীর অবস্থানের মতো পরিবেশ পাও; কোনো হেতু ছাড়াই এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবেনা তাহলে বুঝে নিও তুমি সেই হতভাগা অবহেলিত সৃজনশীলদের দলে।

এখন বলতে হয়, তাহলে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
আসলে অবহেলার চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে এ থেকে পরিত্রাণের আর কোনো পথ থাকে না। তখন গ্রিক ট্রাজেডিই লাইফের প্রতিচ্ছবি।
তাই মধ্যবিত্তের সন্তানদের অল্প বয়সেই বাস্তবতার জ্ঞান লাভ করা জরুরি। শিক্ষক সমাজের উচিৎ হবে তাদেরকে দিবাস্বপ্ন না দেখানো। আর শিক্ষাব্যবস্থার গবেষকদের উচিত হবে স্কুলের জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষামূলক বইগুলোর ফেমিলার ভার্সন না দিয়ে মধ্যবিত্তদের জন্য স্পিসিফিক ভার্সন করে দেওয়া। সরকার অবশ্য তা করবে না, তাই আমার "সচেতনতার পাঠশালা" এর মাধ্যমে আমি তা করে যাবো।

ডেডিকেটেড ফ্যামিলি Vs কনজারভেটিভ ফ্যামিলি


লাইফের একটি রূঢ় বাস্তবতা হলো রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম নেওয়া নম্র-ভদ্র সৃজনশীল ও স্বপ্নপ্রিয় সন্তানদের জীবনে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়; কারণ লাইফের দুঃসময়টাতে ফ্যামিলি তাদের পাশে থাকে না। তাই আগে থেকেই দুঃসময়ের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। সেজন্য তরুণ বয়সেই (১৪-২০ বছর) একজন ছেলেকে তার ফ্যামিলি ডেডিকেটেড না কি কনজারভেটিভ তা জানা প্রয়োজন হয় এবং সেই মোতাবেক লাইফের পরিকল্পনা করতে হয়। সব পরিবার সন্তানের প্রতি ডেডিকেটেড হয় না, কিছু কিছু পরিবার সন্তানের প্রতি ভয়ানক রকমের কনজারভেটিভ হয়; তারা সন্তানকে ব্যবসার লাভ-ক্ষতির মতো করেই হিসেব করে। এখন আমরা ডেডিকেটেড ফ্যামিলি এবং কনজারভেটিভ ফ্যামিলি এর প্রকৃতি বিশ্লেষণ করবো—

প্রথমে অল্প কথায় ডেডিকেটেড ফ্যামিলি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক—
ডেডিকেটেড ফ্যামিলি তার সন্তানের জন্য ডেডিকেটেড। সে তার সন্তানের জন্যই সবকিছুর পরিকল্পনা করে। সে তার সন্তানের দুঃসময়ে পাশে থাকে। দোষ করলে ভুল ধরিয়ে দেয় এবং সংশোধন হওয়ার পথ দেখিয়ে দেয়। লাইফে কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে তা সমাধানের পদক্ষেপ নেয় যাতে ভবিষ্যতে সেক্ষেত্রে আবারও ব্যর্থতা না আসে। সন্তানের বস্তুগত ও মানসিক প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করে। নিজের দৈনন্দিন জীবনে যেরূপ মানসিক পরিস্থিতিই আসুক না কেনো তার প্রভাব সন্তানের উপর পড়তে দেয় না। মোটকথা সন্তানকে রূপকথার গল্পের সেই নিজের প্রাণপাখির মতো করে রাখে।

এখন আমরা কনজারভেটিভ ফ্যামিলির বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করবো।
তুমি যদি কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তান হয়ে থাকো তাহলে তোমার সাথে নিম্নোক্ত ঘটনাগুলো ঘটবে:—
১. ঘটনা যাই ঘটুক তা তোমার দোষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হবেঃ বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করি। কোনো কাজে কেউ সফল না হওয়ার পেছনে নিজের দোষ কিংবা অদক্ষতা ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কোনো দুর্ঘটনার কারণে কেউ কোনো কাজে ব্যর্থ হতে পারে। দুর্ভাগ্যের কারণেও কেউ কোনো কাজে ব্যর্থ হতে পারে, আবার সেই কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রবলেম এর কারণেও সে সেই কাজে ব্যর্থ হতে পারে। আবার কোনো বিশেষ কারণেও সে সেই কাজে ব্যর্থ হতে পারে।
এক্ষেত্রে ন্যারো মাইন্ডের মূল্যায়ল হলো ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান না করে দুর্ঘটনা, দুর্ভাগ্য, প্রবলেম, বিশেষ কারণ যাহাই ঘটুক না কেনো সবকিছুকেই তার দোষ হিসেবে মূল্যায়ন করা।

একটা উদাহরণ দিই—
২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে একটা পরীক্ষা দেওয়ার পর অসুস্থ হলাম ও সেদিন বিকেলে ঢাবির রেজাল্ট হওয়ার পর দেখা গেলো অল্পের জন্য মেরিট লিস্টে আসতে পারিনি। এতে আরও ভেঙে পড়লাম, কারণ আমার লাইফে বরাবরই এই সমস্যা আছে, কোনোকিছু কাছাকাছি গিয়ে অল্পের জন্য হয়না। যাহোক একটু সুস্থ হওয়ার পর পরদিন সকালে সেদিন বিকেলে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষাটা না দিয়েই বাড়িতে রওয়ানা হলাম। সঙ্গে বাবা ছিলেন। বাবা বাসের জানালার পাশে ছিলেন আর আমি যাতায়াতের পথটার সঙ্গে লাগা সিটে ছিলাম।
গাড়িতে কিছু লোকাল যাত্রী তুলেছিল ও আমার কাছে একজন বৃদ্ধা দাঁড়িয়েছিল। এই সময়ের একটা মুহূর্তে আমি গভীর চিন্তায় চলে যাই, তখন আমার দেহটাই শুধু বাসের সিটে পড়ে ছিল, আমি চিন্তার জগতে ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তেই বাসে হাইড্রোলিক ব্রেক চাপানো হয় ও সেই বৃদ্ধা ছিটকে পড়ে যেতে ধরে, যেহেতু আমি অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় ছিলাম তাই আমি তাকে ধরতে পারিনি ও পাশে থাকা অন্য একজন ছেলে তাকে আটকায়।
তখন থেকেই আমার বিপক্ষে একটা শক্ত যুক্তি দাঁড় হয়ে গেলো যে, একটা বুড়ি মানুষ পড়ে যাচ্ছে তাকে এ আটকায় না, এ জীবনে কী করবে? এর পেছনে বেশি টাকা খরচ করে কী হবে?
কিন্তু আমি যে সেই কাজ করার মতো অবস্থায় ছিলাম না, তা বোঝার দরকার নাই; একটা বিশেষ কারণে একটা কাজ আমি করতে পারিনি, অথচ এটাও এখন এটা আমার দোষ!

আরেকটা ঘটনা, আমি একটা বিসিএস কোচিংয়ের অফিশিয়াল কাজে জয়েন করেছিলাম। সেখানে মাত্র কয়েকদিন ছিলাম। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও সেখানে টিকে থাকতে পারি নাই। আমার বংশগত সুত্রে পাওয়া উচ্চমাত্রায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ছিল। অফিসটা ছোট হওয়ায় নিজের ডেস্কে ঢুকতে ও বের হতে হলে আরও দুইজনকে উঠতে হতো, বিষয়টা বাসের জানালার পাশে বসা যাত্রীর বের হওয়ার মতো। শেষে আমি একদিন শরীরে গ্যাস আটকে রাখলাম; সন্ধ্যার দিকে আমার শরীর বিগড়ে গেলো ও মনেহলো শরীরের প্রতিটি কোষ বিষাক্ত হয়ে গেছে।
আমার আবার বংশগত সুত্রে পাওয়া আমাশয়ও আছে। কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষুধ খেলে আমাশয় হয়, আমাশয়ের ঔষুধ খেলে আবার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
ফলে আমার বডি সাপোর্ট না করায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও চাকরিটাতে টিকতে পানি নাই।
অথচ এই সমস্যাঘটিত বিষয়টাকেও আমার দোষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে; আমি নাকি ভণ্ডামি করে চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি।

অন্যদিকে আমার পূর্বপুরুষদের উপহার দেওয়া হাফ ডজন বংশগত রোগ আমার লাইফের সফলতার পথকে পাখির ডানা বেঁধে রাখার মতো বেঁধে রেখেছে।
মানুষ তার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পায় সম্পদ, আশির্বাদ, চাকরির কোটা ইত্যাদি। আর আমি পেয়েছি আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, এলার্জি, চোখের রোগ, হরমোনাল রোগ ও ব্রেইন এর রোগ।
আমার ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাঞ্চ ফসকে গেছে শর্ট টাইম মেমোরি লসিং ও হ্যালোজিনেশন নামক দুটি বংশগত ব্রেইন রোগের কারণে।
মানুষ সবাই সফলতায় কৃতিত্ব নিতে চায়, কিন্তু কেউ ব্যর্থতার দায় নিতে চায় না। অধিকন্তু মানুষ সবসময় নিজের দোষ ও দায় অন্যের উপর চাপাতে অভ্যস্ত।
এভাবে লাইফের প্রতিটি ঘটনাতেই দেখা যায় আমার কোনো দোষ না থাকলেও সেটাকে আমার দোষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।

২. তোমার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হবেঃ ফ্যামিলি যদি সবসময় আত্মীয়স্বজনের উৎসবাদি ও ফর্মালিটি নিয়ে ভাবাছন্ন থাকে। তোমার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো নজর এড়িয়ে যায় ও উপেক্ষিত হয় তাহলে বুঝবে চূড়ান্ত পর্যায়ে যেটা হবে সেটা হলো একসময় তারা তোমাকে ও তোমার স্বপ্নকে এড়িয়ে যাবে ও জীবনে সফলতা আসতে বিলম্ব হলে তারা তোমাকে সাপোর্ট দেওয়া বন্ধ করে দেবে।

৩. অন্যখানে উদ্ভব হওয়া রাগের প্রভাব তোমার উপর এসে পড়বেঃ যদি দেখতে পাও যে পরিবারের কর্তার এরূপ একটা উদ্ভট স্বভাব আছে তা হলো মাঠে বা অফিসে কোনো বিষয় নিয়ে তার রাগ উৎপন্ন হয়েছে এবং তা সে সেখানে দেখাতে না পেরে তা সেখানে চেপে রেখে বাড়িতে এসে পরিবারের লোকজনদের সাথে অযথাই রাগারাগি করছে তাহলে বুঝে নেবে সেই ফ্যামিলিতে তোমার ভবিষ্যৎ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

৪. তোমার অবর্তমানে তোমার মূল্যবান জিনিসপত্র অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাবেঃ দীর্ঘদিন বাইরে থাকার ফলে যদি দেখতে পাও বাড়িতে তোমার মূল্যবান জিনিসপত্র অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে, তোমার রাখা বইপুস্তক ছুঁচো ইঁদুর-উঁইপোকায় খেয়ে ফেলছে; তাহলে বুঝবে একসময় যখন তোমার সৃজনশীল উদ্যোগ সফলতার খুব কাছে, আরেকটু সাপোর্ট দরকার ঠিক সেই সময়টাতে তোমার সাপোর্ট পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

৫. তোমাকে সন্তানের মতো নয়, নিজ বাড়িতে শরণার্থীর মতো জীবন যাপন করতে হবেঃ তুমি যদি নিজ বাড়িতে সন্তানের মতো বেড়ে উঠার পরিবেশ না পেয়ে শরণার্থীর অবস্থানের মতো পরিবেশ পাও; কোনো হেতু ছাড়াই এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবেনা তাহলে বুঝে নিও তুমি সেই হতভাগা অবহেলিত সৃজনশীলদের দলে।

৬. তোমার দুর্দিনে তুমি একা হয়ে যাবে: কনজারভেটিভ ফ্যামিলিতে তোমার দুঃসময়ে তুমি একা হয়ে যাবে। তোমার লাইফ নিয়ে ভাবার কেউ থাকবে না অর্থাৎ তোমাকে নিয়ে ভাবার সময় কারো থাকবে না; টিভি দেখা, গল্পসল্প করে বেড়ানো, অন্যের ভলান্টিয়ারগিরি করার সময় থাকবে অথচ তোমার লাইফ নিয়ে ভাবার ইচ্ছা কারো থাকবে না।

অতএব, আমরা ডেডিকেটেড ফ্যামিলি ও কনজারভেটিভ ফ্যামিলি এর মধ্যে মোটামুটিভাবে নিম্নোক্ত পার্থক্যগুলো দেখতে পাই—
১. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি হলো ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানকারী আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলি হলো দোষ আরোপকারী।

২. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়, যেমন— আমার এক চাচা তার ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় ৬ বিষয়ে ফেল করে; তাই তিনি এর কারণ অনুসন্ধান করেন এবং বিভিন্নজনের পরামর্শ নিয়ে ছেলেকে একটা আবাসিক কোচিংয়ে ভর্তি করিয়ে দেন ফলে সে ভালো সাপোর্ট পেয়ে এসএসসিতে ৪.৫ এর উপরে রেজাল্ট করে।
অন্যদিকে কনজারভেটিভ ফ্যামিলি ব্যর্থতার জন্য সন্তানকে দোষারোপ করে আর্থিক বরাদ্দ ও অন্যান্য সুবিধা কমিয়ে দেয়। যেমন— আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় গণিতে এ+ পাই। কিন্তু ৭ম শ্রেণির গণিতে খারাপ করি বলে গণিত প্রাইভেটের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয় ও তা কমিয়ে দুই মাস করা হয়।

৩. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি তার সন্তানের দুর্দিনে তার পাশে দাঁড়ায়, অন্যদিকে কনজারভেটিভ ফ্যামিলি তার সন্তানের দুর্দিনে মীরজাফরের বাহিনীর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে কিংবা অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যায়; অনেক সময় দেখেও না দেখার ভান করে।

৪. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি তার সন্তানের দরকারি জিনিস সরবরাহের জন্য কোনো সম্পদ বিক্রি করে হলেও তা পূরণ করে থাকে আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলি প্রথমে সেটা দেবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দেয় তারপর দিনের পর দিন যার, মাসের পর মাস যায়, বছরের পর বছর যায় দিবে দিবে বলে সময় পার করে আসলে দেয় না।

৫. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি তার সন্তানের লেখাপড়া ও লাইফের উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করাকে ইনভেস্ট মনে করে আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলি তার সন্তানের এসব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করাকে অনর্থক ব্যয় মনে করে।

৬. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি তার সন্তানের জন্য বেশি সময় দেয়, সন্তানের লাইফ নিয়ে চিন্তা ও গবেষণায় মগ্ন থাকে আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলি আত্নীয়স্বজন, সমাজ, পাড়া প্রতিবেশি ইত্যাদিতে নিজের ইমেজ ভালো রাখতে সদা তৎপর থাকে ও সেখানে বেশি প্রচেষ্টা ব্যয় করে এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কর্মকাণ্ড করে বেড়ায়, সন্তানের লাইফ নিয়ে ভাবার সময় তাদের থাকে না।

৭. ডেডিকেটেড ফ্যামিলি সন্তানের দুর্দিনে তাকে মানসিক সাপোর্ট দেয় আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলি সন্তানের দুর্দিনে উল্টো তার সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং যে গাছে ফল ধরে না সেই গাছ যেমন কেটে ফেলা হয় তেমনি তাকেও আনপ্রডাকটিভ হিসেবে মূল্যায়ন করে দূরে সরে দেয়।

মোটকথা, ডেডিকেটেড ফ্যামিলির চিন্তাভাবনা হলো "সন্তানের জন্য আমরা" আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলির চিন্তাভাবনা হলো "আমাদের প্রয়োজনে সন্তানাদি"; অর্থাৎ, ডেডিকেটেড ফ্যামিলি হলো সন্তানের প্রতি ভলান্টিয়ার মাইন্ডেড আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলি হলো ব্যবসায়ীক মাইন্ডেড।

তবে তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি আশার কথা হলো বর্তমানকালে প্রায় সব ফ্যামিলিই ডেডিকেটেড ফ্যামিলি; অতি অল্প কিছু কনজারভেটিভ ফ্যামিলিই সমাজে রয়েছে। আর সেসব কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সৃজনশীল সন্তানেরা লাইফের সফল ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা করার বিষয় পরামর্শ নিতে অবশ্যই আমাদের Advice Desk এ আসবেন।